বাবা আজকে তো ছুটির দিন। আমিও তোমার সাথে বাজারে যাব।
ঠিক আছে, চল তাহলে। এই যে, বাজারের ব্যাগটা হাতে নে।
শোন, তোকে আমি তোর আনিস চাচার দোকানে রেখে বাজারগুলো করে আনব। তারপর দু’জনে একসাথে বাড়ি ফিরব।
হিরা বলে, ঠিক আছে বাবা।
আনিস, কেমন আছ ? ও বজলু । ভালো। তুমি কেমন আছ ? ভালো আছি।
ও মা ! দেখি আমার মামুনিও এসেছে !!! হ্যাঁ।
আসসালামু আলাইকুম চাচা।
ওয়ালাইকুম সালাম। আস মা, ভিতরে আস।
ওকে রেখে গেলাম। আমি বাজার গুলো করে আসি।
আনিস সাহেব বলে, বোস মা, এই চেয়ারে বোস। চকলেট খাবে ?
হিরা বলে, হুঁ খাব। এই হাবিব, হিরার জন্য কিছু চকলেট কিনে আন তো।
মা তোমার লেখাপড়া কেমন চলছে ? ভালো চাচা।
এরপর প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পর বাজার করে বজলু সাহেব এসে বলে, আনিস বাড়িতে আস না কেন ?
আসব দোস্ত। একটু সময় পেলেই আসব । বোঝ তো, সারাদিন দোকান-দারি করি।
বজলু সাহেব বলে, আসি তাহলে। চলরে মা, আমার হাতটা ধর।
হিরা দোকান থেকে বের হয়ে তার বাবার হাত ধরে হাঁটতে থাকে।
হঠাৎ একটু দূরে জটলা দেখে বলে, বাবা ! মানুষগুলো জটলা পাকিয়ে আছে কেন ?
বজলু সাহেব বলে, চলতো কাছে গিয়ে দেখি ।
কাছে গিয়েই বজলু সাহেব দেখতে পান, মানুষগুলো ১২ বছরের একটি ছেলেকে মারছে।
ছেলেটির হাঁটু ছেল্লা গেছে, কপাল ফেঁটে রক্ত বেরুচ্ছে।
বজলু সাহেব জিঞ্জেস করে, কি হয়েছে ভাই ?
হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে একজন মানুষ বলে, আমার ৫০০ টাকা পকেটমেরে নিয়ে নিয়েছে এই বেটা পকেটমার। বেটা নাকি মায়ের ঔষধ কেনার জন্য পকেট মেরেছে।
কথাটা শুনার পর বজলু সাহেব ভিড় থেকে বেরিয়ে হিরার কাছে আসে।
বাবা, উনাকে কি মানুষগুলো মেরেছে ? হ্যাঁ রে মা। কেন ?
ছেলেটা একটা মানুষের পকেট থেকে ৫০০ টাকা চুরি করেছে তো তাই।
উনার কপাল দিয়েতো রক্ত পড়ছে !!! বজলু সাহেব বলে, চল এসব আর দেখতে হবে না।
পিছন ফিরতেই দেখে আনিস সাহেব এসে দাঁড়াল। কি হয়েছে বজলু ?
কি আর ! পকেটমার ধরা পড়েছে আর সাধারন মানুষ বেদম পিটুনি দিয়ে রাগ ঝাড়ছে। ৫০০ টাকা চুরি করেছে মায়ের ঔষধ কেনার জন্য। ছেলেটাকে দেখে মনে হল, এবারই প্রথম চুরি করেছে।
আনিস সাহেব বলে, ওর মত কত অসহায় মানুষ আছে যারা কাজের সন্ধান না পেয়ে চুরির আশ্রয় নেয় !!
বজলু সাহেব বলে, অথচ দেখো এই পকেটমার, চোর আর ভন্ডদের সাথে আমাদের সাধারন মানুষের চেহারা কোনই পার্থক্য নেই।
কি আছে নাকি ? আনিস সাহেব বলে, না নেই।
সামান্য ৫০০ টাকা চুরির জন্য ছেলেটা গণপিটুনি খেল। তাও আবার মায়ের ঔষধ কেনার জন্য। বেশ মায়া লাগছে।
বজলু সাহেব বলে, আমারও মায়া লাগছে। অথচ তাদের জন্যে আমাদের ঘৃণা জন্মায় না যারা লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েও খেলাপি করে ইচ্ছে করে। তাদের প্রতি ঘৃণা জন্মায় না যারা ভোটের আগে সাধারন মানুষকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের স্বপ্ন ভাঙে, কর ফাঁকি দেওয়া শিল্পপতিদের ওপর, সরকারি হাসপাতালে সময় না দিয়ে বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা ডাক্তারদের ওপর, খাদ্যে ভেজাল দেয়া এমনকি অকারনে দাম বাড়িয়ে বড় মুনাফা অর্জন করা ব্যবসায়ীদের ওপর.....।
কিছুক্ষণ থেমে আনিস সাহেব বলে, কেন ঘৃণা জন্মায় না জানিস ?
তারা এই সমাজে ভালো মানুষ সেজে বসে থাকে। দামি গাড়িতে চড়ে। গোপনে মানুষের বড় ক্ষতি করে অথচ সামনা সামনি তার সাথে হেসে হেসে কথা বলে। আমাদের মত সাধারন মানুষদের চেহারার সাথে এদের কোন পার্থক্যই নেই।
বজলু সাহেব বলে, আজ বিজয় দিবস না ?
হ্যাঁ, আজ বিজয় দিবস। তবে সমাজের এইসব মুখোশ পড়া মানুষগুলোর জন্য বিজয় শব্দটা আমাদের কাছে উপহাস হয়েই আছে।
আনিস সাহেব বলে, আমরা যদি এই বিজয় দিবসকে মানবিকতায় মানবিক হওয়ার এবং জেগে ওটার একটা সুযোগ হিসেবে নিতাম !!!!!!!!!!!!
তাহলে আমরা আগামী দিনে ভালো কিছু পেতাম। কিন্তু আমরা এটাকে সুযোগ হিসেবে না নিলেও কি হবে, ওই সব মুখোশধারী মানুষগুলোতো সুযোগটা নিয়েছে।
আনিস সাহেব করা সুরে বলে, তারাতো নিয়েছে প্রতারনা করার, মানবতা বিরোধী কাজ করার, দেশটাকে ভঙ্গুর একটা রাষ্ট্রে পরিণত করার সুযোগ হিসেবে .....। তবুও তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা জন্মায় না !!!!!!!!!!!!!!