Thursday, January 13, 2011

টুকরো স্মৃতি : ১

ঘড়িতে বাজে সকাল ৮ টা বেজে ২৮ মিনিট। হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে হেঁটে ক্লাসে যাচ্ছি। হঠাৎ হাঁটতে হাঁটতে কানে আসল, দূরে কোথাও একটি কোকিল ডাকছে। মন ভোলানো সেই কোলিলের ডাক। আহা !!!!!!! মনটা আনন্দে নেচে উঠল। খুব সুন্দর একটা অনুভূতি দিয়েই সকালটা শুরু হল। সত্যিই আল্লাহ নিপুণ কারিগরের মত নিঁখুত ভাবেই আমাদের এই প্রকৃতিকে সাজিয়েছেন। আল-হামদুলিল্লাহ। প্রকৃতি পূনরাবৃত্তি পছন্দ করে। তাইতো হঠাৎ চলে গেলাম পূরনো স্মৃতির ভেলায় ভাসতে................

এইচ.এস.সি পরীক্ষার বাকি ৪ মাস। এমনসময় ফার্মগেট এর একটি বাসায় উঠলাম। দুই রুম। একটিতে আমি আর বাপ্পী, অন্যটিতে দোলন থাকে। ফার্মগেট এর এই বাসায় থাকার সময়টা আমার জীবনের অন্যতম আনন্দের সময় ছিল। আমি স্বভাবতই কম লেখাপড়া করতাম, দেরি করে ঘুম থেকে উঠতাম। আর চোখ খুলেই দেখতাম বাপ্পী আর দোলন টেবিলে লেখাপড়া করছে। দোলন ছেলেটি বেশ মজার ছিল। তার ঘরের টিউব লাইট-টা আমার দেখা ৪ মাসে কতটুকু সময় বন্ধ ছিল বলে দিতে পারত। কিছুটা এরকম হতে পারে টিউব লাইটটির বক্তব্য, “সেই জন্ম থেকে জ্বলছি”.........। হা হা হা। সারাদিনই টেবিলে বসে পড়ার ধৈর্য সে কোথা থেকে পেত আমি ভেবে অবাক। তাই আমি আবার মাঝে মাঝেই তার সাথে গল্প করতে যেতাম। কখনো কখনো পড়তে পড়তে বুকে বই নিয়ে মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ে। আমারা সব সময় একে অপরকে বস বলে ডাকতাম, যদিও এর কোন সুনির্দিষ্ট কারন ছিল না। আর আমার রুমমেট- বাপ্পী; কিছুটা অদ্ভুত ছিল। তার বাবা সারাক্ষণ খালি চিন্তা করে, বাপ্পী কি করছে, খাইল কি না, ঘুমাইল কি না। মডেল টেষ্ট এর পরীক্ষা গুলো দিচ্ছে কি না........ ইত্যাদি। আর বাপ্পী ? তার এ বিষয়ে কোন ভাবনা নেই। তার বাবা মাঝে মাঝে আমাদের সাথে থাকতেন। তখন অগত্যা বাপ্পীকে টেবিলে বসে থাকতে হত। আঙ্কেল বুঝত যে সে পড়লে, অথচ বন্ধু বাপ্পী কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। মাছে মাঝেই আমায় বেশ মজার মজার গল্প শুনাত। এমন অনেক রাত গিয়েছে আমরা দুইজন বারান্দায় বসে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়া দেখেছি। আর গল্প করেছি ঘন্টার পর ঘন্টা। মাঝে মাঝে মাঝরাত পেরিয়ে গেলেও আমরা জ্যোৎস্নার রূপালী চাঁত দেখার জন্য অপেক্ষা করেছি। একে আপরের অনেক স্মৃতি ভাগাভাগি করেছি। অপেক্ষা করেছি চাঁদমামাকে বলার জন্য, আপনার আলো দিয়ে আমাদের মনের ভিতর জমে থাকা অন্ধকার প্রকোষ্ঠগুলো একটু আলোকিত করে দিন তো। বাপ্পী মাঝে মাঝে আমায় ‘বলদা গরু’ বলে ডাকত। তার অবশ্য কিছু কারন ছিল। বেশ অলস প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় আমি স্বভাবতই বাজার করতে যেতে চাইতাম না। আমার যেদিন বাজার করার সিডিউল থাকত, সেদিন বাইরে যেতাম অথবা বাপ্পীকে দায়িত্ব দিয়ে যেতাম। এমন কি মাঝে মাঝে আমায় ‘রামানুজন’ বলেও ডাকত। কাওয়া, গোসল কোন কিছুর নির্দিষ্ট সময় ছিল না তার। তবুও এই বন্ধুটিকে আমার এখনও কেশ পছন্দ। কারন, তার সুন্দর একটা মন ছিল এবং এখনও আছে বলে আমার বিশ্বাস।

মাঝে মাঝেই মনে হয়, এই বুঝি বাপ্পী আমায় ‘রামাজানুন’কিংবা রামানুজন' বলে ডাকল। অথবা বলল, এই ছেলে, বাজার কে করবে ? কতদিন বাজারে যাওনা মনে আছে ??? অথবা দোলন আমার টেবিলের কাছে এসে বলল, কি বস, কি পড়তেছো ? তারপর মুখটা আমার কাছে এনে আস্তে করে বলল, আজকে বাপ্পীর মেজাস কেমন ? কথাটা বলেই একটা হাসি দিয়ে তার রুমে চলে গেল। এমনকি খাওয়ার সময় তরকারি নিয়ে হালকা হাতাহাতি করা বাপ্পীর সাথে............

প্রিয় দোলন আর বাপ্পী,
তোমাদের সাথে ছিলাম মাত্র ৪ মাস। তবুও মনেপড়ে এখনও তোমাদের কথা। মনেপড়ে, অনেকক্ষণ লেখাপড়ার পর আজগোবি গল্প করা, পড়ার মাঝ খানে অদ্ভুত সব কথা বলে চিৎকার করা, এক সঙ্গে খাইতে বসার মুহুর্তগুলোর কথা। বন্দুত্বের বন্ধন আছে, সহজে কি তা ভোলা যায় বল ? কোন দিন তোমাদের সাথে দেখা হবে কি না তা স্রস্টাই ভালো জানেন। তবুও বলতে পারি, হৃদয়ের মণিকোঠায় সেই মুহুর্ত্বগুলো তারার মত জ্বলজ্বল করে বেঁচে থাকবে আর সৌরভ ছড়াবে আমার স্মৃতিতে...........।

ইস ! যদি নটরডেম এর সেই উদ্যমে ভরা দিন গুলোতে একবার কিছু সময়ের জন্য ফিরে যাওয়া যেত..........