উৎসর্গ…
এঞ্জেল অঙ্গনা…
আমায় বড় ভাইয়ের মত মানে। অতি চমৎকার করে অধিকার
নিয়ে কথা বলে সে! আমি তন্ময় হয়ে শুনি। বেশ ভাল লাগে।
সাধারণের মাঝেও একটু অন্যরকম। পার্থক্য করা যায় সহজেই !
কী চমৎকার জ্যোৎস্না উঠেছে দেখ ?
অন্ধকারে জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোয় বৃক্ষগুলোকে মনে হচ্ছে তারা যেন সাক্ষীর মত দাড়িয়ে আছে। পাতাগুলো স্থির, আবার কোনটা মাঝে মাঝে দুলছেও।
হয়ত আমাদের বলে দিচ্ছে, হে মানব সমাজ, তোমাদের শত অবহেলা সহ্য করেও আমি বিশ্বাসী বন্ধুর মতই তোমাদের পাশে আছি……..বেঁচে আছি।
অল্প অল্প কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে চারপাশের পরিবেশ। স্রস্টার অসীম করুণা বয়ে যাচ্ছে অবিরত।
পুথিবীর সব কিছুকেই কেমন যেন নির্ভার মনে হচ্ছে। কোন দায় নেই, কোন দায়িত্ব নেই…… কেবলই ভাবলেশহীণ ভাবে বেঁচে থাকা……..
আচ্ছা রোকন, বলতো আমার মনের ভেতরটায় এমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন ???
যেন বুকের ভেতরটায় কেউ একজন ছিল, যে আজ ভেতরটা শূন্য করে চলে গেছে।
আজ, সেই মানুষটাকে বড্ড বেশি মনে পড়ছে। যদিও মনে রাখার মত সে অনেক কিছুই করেছে !!!
কোথায় যেন পড়েছিলাম,
“দুই উপায়ে মানুষের মনে জায়গা করা যায় সহজে- এক, বিখ্যাত হয়ে, দ্বিতীয় কুখ্যাত হয়ে’’
অথচ কী আশ্বর্য !!! আজ আমার নাদিরাকেই বেশি মনে পড়ছে। মনে পড়ছে তার মানবীয় কাজ গুলোর কথা।
রোকন জিঞ্জেস করে, আচ্ছা তোদের মাঝে বিচ্ছেদ কেন হলো ???
আমি কিছু বলি না। কেবল তাকিয়ে থাকি শূন্যতা নিয়ে ওই দূর নীলিমায়…….
আমি খুব সুন্দর করে নাদিরাকে ভালবাসার চেষ্টা করেছিলাম। আমার দিক থেকে যথেষ্ট responsible, careful থাকার চেষ্টা করেছিলাম।
সব-ই ছিল, কেবল ছিল না আমার প্রতি ওর বিশ্বাস।
সে মানুষের কথায় বিশ্বাস করত, অথচ আমার কথা বিশ্বাস করত না। বাইরে কার কাছে কি শুনে আমায় এসে বলত, আমার বাবা নাকি পরকীয়া করে, আমি নাকি জারজ সন্তান। সহ আরো অনেক খারাপ কথা। এমনকি আমাকে নিয়েও বাজে বাজে কথা বলতে সে দ্বিধাবোধ করত না।
আমি চেষ্টা করতাম সেগুলো ঠান্ডা মাথায় শুনতে । কারন, মানুষ রেগে গেলে উল্টোপাল্টা বলে, এটাই স্বাভাবিক।
আর আমাদের মাঝে ঝগড়া লেগেই থাকত। একটা জিনিস কি জানিস, জোর করে ভালবাসা হয় না।
পরে অবশ্য সে স্যরি বলত. কিন্তু এতটুকু তো বোঝা যায়, কে স্যরি অনুতপ্ত হয়ে বলে আর কে মন রক্ষার্থে বলে…….
অনেক ঝগড়া আর ঝামেলার পর আমাদের ব্রেক আপ হয়ে যায়। এর পরও সে সুযোগ পেলেই আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করত।
আমি একদিন বড় ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম এ বিষয়ে। আমি তাকে বলেছি, ভাইয়া আমি নাদিরাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কারন সবাই ক্ষমা করতে পারে না। যারা পারে তারা সত্যিই ভাগ্যবান। তবে ভুলে যাই নি তার দেওয়া কষ্টগুলো। ভুলে গেলেতো আর শিক্ষা নেওয়া হবে না, তাই না ?
রোকন তন্ময় হয়ে কথাগুলো শুনছে। আচ্ছা, এখন তার খবর কি জানিস ???
জানি। এখন সে অন্য একটি ছেলের সাথে প্রেম করে। সেই ছেলেটা একদিন ফেইসবুকে আমায় রিকুয়েষ্ট পাঠায়। আমি বুঝতে পারি সে কে। পরে একদিন তার সাথে চেট করি।
সে আমায় অনেক প্রশ্ন জিঞ্জেস করে, কেন আমাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেল, আমার কি দোষ ছিল, নাদিরা কেমন মেয়ে ইত্যাদি।
আড়মোরা ভেঙ্গে চোখ বড় বড় করে রোকন তাকিয়ে থাকে আমার দিকে ! !
তুই কি বললি তখন ???
আমি ওকে বলেছি, নাদিরা খুব ভাল মেয়ে। আসলে আমার কারনেই আমাদের সম্পর্ক ভেঙ্গেছিল। আমি খুব রাগী একটা মানুষ আর আমাদের মাঝে মতের মিল ছিল না। নাদিরা অনেক চেষ্টা করেছে সমঝোতা করার, ভাল লাগানোর কিন্তু আমিই পারি নি !!!!!
রোকন বলে, তুই এই মিথ্যে কথা গুলো বললি কেন ????
আমি মিথ্যে বলিনি বন্ধু। আসলে কোথায় যেন পড়েছিলাম, “কারো সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে তার সম্পর্কে ভাল ভাল কথা বলতে হয়”।
আমি যা শিখেছি তাই বলেছি আর কি। আর নাদিরা সত্যিই একটা ভাল মেয়ে ।
কথাটা শুনে রোকন কিছুটা রেগে যায়। আমি তোকে সত্যিই বুঝি না। তুই একটা পাগল……বদ্ধ পাগল……..
আমি সব শুনে কেবলই হাসি আর তাকিয়ে থাকি……… আর জ্যোৎস্না গলে গলে পড়ছে……..
স্টুয়ার্ট ফক্স নামের একজন ব্যক্তি তার এক বন্ধু সহ অস্ট্রেলিয়ার একটি বুফে-তে খেতে গিয়েছিল। খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর স্টুয়ার্ট আর তার বন্ধু বিল পে করে চলে আসছিল। নিজের সেল ফোনটা ভুলে রেখে আসায় স্টুয়ার্ট আবার বুফেতে সেই টেবিলে যায়। সেলটা নিয়ে ফেরার সময় ঘটে যায় দূর্ঘটনা। মেঝেতে একটু পানি পড়েছিল তা কেউ লক্ষ্য করে নি। আর স্টুয়ার্ট সেখানে পা পিছলে পড়ে যায়। এরপর সে ক্ষতিপূরন এর জন্য আদালতে মামলা করে। আদালত তার মামলায় বুফে কর্তৃপক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করে। এরপর ওই বুফে কর্তৃপক্ষ স্টুযার্টকে ১০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার ক্ষতি পূরণ দেয়।
আরেকটা ঘটনা বলি……..
আমি সেদিন কলেজগেট থেকে হেঁটে আসছিলাম। রাত প্রায় ৯ টা বাজে। একজন আপু মেডিকেলে পড়ে, মনে হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ইন্টার্নী করছে। তিনি হেঁটে আসছিলেন। সে সময় আশা ইউনিভার্সিটির সামনে প্রচন্ড জ্যাম লেগেছিল। ইলেকট্রিসিটি না থাকায় রাস্তার আশেপাশে বা নিচে গর্ত আছে কি না তা বোঝা যাচ্ছিল না। আশা ইউনিভার্সিটির একটু আগে রাস্তার পাশেই একটা বড় গর্ত ছিল। হঠাৎ সে আপু হাঁটতে হাঁটতে সেই গর্তের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চারপাশে গাড়ি গিজগিজ করছে। অবশেষে তিনি পা বাড়ালে তার বাম পা পড়ে যায় গর্তে। সাথে সাথেই তিনি হাউমাউ করে চিৎকার করে কেঁদে উঠেন। তিনার পা-টা যে ভেঙ্গে গিয়েছিল তা আর বোঝার বাকি ছিল না। অবশেষে পথচারিরা তাকে গর্ত থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল।
উপরোক্ত দুটি ঘটনাকে বিচার করলে আমরা দেখতে পাই, সামান্য পা পিছলে পড়ে যাওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ক্যাফে কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল। অথচ আমাদের দেশের সেবা দানকারী প্রতিষ্টান যাদের দায়িত্বে অবহেলার কারনেই সেই মানুষটি গর্তে পড়ে গিয়ে পা ভাঙল তাদের কিছুই হয় না। তাদের কোন চিন্তাভাবনাও নেই এ নিয়ে। নেই সেবাদানকারী প্রতিষ্টানের মানুষের জীবন রক্ষার্থে কোন প্রচেষ্টা। থাকলে নিশ্চই তারা ওই গর্তের পাশে, সতর্ক বাণী সংবলিত কোন সাইনবোর্ড অবশ্যই লাগাতেন।
হায় !সেবাদানকারী বাইরের দেশের প্রতিষ্টান আর আমাদের দেশের সেবাদানকারী প্রতিষ্টানের মধ্যে কত পার্থক্য !!!!!!!
মার্কিন সিনেটর জন মেকেইন তার বিবাহের পরও অন্য একজন মহিলা’র সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন। পরে বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেলে, তিনি মিডিয়াতে ওই মহিলার চরিত্র সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ্যকথা বলেন। অথচ যতদূর জানা যায়, ওই মহিলা সেরকম খারাপ চরিত্রের ছিলেন না।
কেন জানি আমরা মানুষেরা ইদানিং কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি। মানুষের ক্ষতি করেও এমনকি বিশ্বাসঘাতকতা করেও আমাদের কোন অনুশোচনা হয় না। আমরা যদিও সৃষ্টির সেরা জীব তবুও আমরা ভুল করবো এটাই স্বাভাবিক। আর ভুল করেই আমরা প্রমাণ করি, আমরা পরম করুণাময়ের অতি সাধারণ একটি সৃষ্টি মাত্র।
প্রিয় পাঠক, আমরা ভুল করি, সবাই ভুল করে। তবুও আমরা যেন বন্ধনের বিশুদ্ধতা আর বন্ধনের প্রতি বিশ্বাস বজায় রাখার চেষ্টা করি। ছোট-খাট ভুল যেন বন্ধনের প্রতি কোন আঁচর না ফেলে সেদিকে খেয়াল রাখি।
আমরা সবাই জানি, ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ। আমরা মহৎ হতে না পারি, তবুও যেন মানুষকে ক্ষমা করে স্রস্টার এই গুণ-টা অর্জনের চেষ্টা করি। তবে এই ক্ষমা হওয়া উচিত তাদের জন্য যারা ভুল করে অনুতপ্ত হয়।
তাদের জন্য নয় যারা বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করে আমাদের সাথে। তবুও অদ্ভুত হলেও সত্য যে, আমরা আমাদের ক্ষমতাবানদেরও ক্ষমা করে দিচ্ছি এত কষ্ট, লাঞ্চনা, অপমান আর বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করার পরও……..
একজন সত্যিকারের মানুষ আর আমাদের মাছে পার্থক্য কতটুকু বলুন তো?????