Saturday, December 25, 2010

এই যে আমি......(গল্প)

উৎসর্গ…
মুখে যার সবসময় একটা স্নিগ্ধ হাসি লেগে থাকে।
প্রিয় বান্ধবী পিয়া’কে।
তোমাদের একজন ভালো বন্ধু হওয়ার চেষ্টা আমার আজও বর্তমান।




ভূমিকা…
আমার কাছের মানুষ গুলোকে নিয়ে আমার লিখতে বেশ ভালোই লাগে। একদিন হঠাৎ করেই ভাবলাম, একটা গল্প লিখি। যেই ভাবলাম, তার পরক্ষণেই লিখতে বসে গেলাম। এটা আমার লিখা প্রথম কোন গল্প। আমার বিশ্বাস, এই লিখাটা অন্যকারো হাতে পড়লে আরো ভালো হতো। তবে চেষ্টা করেছি যত্ন করে লিখার। লিখতে পেরেছি কি না এটা বিচারের দায়িত্ব আপনাদের। যত্ন করে লিখতে গিয়ে বেশকিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল করে ফেলেছি। যা অন্যমনস্ক পাঠকের মত আপনাদেরও চোখ এড়িয়ে যাবে এটুকুই যা ক্ষীণ প্রত্যাশা।
ভাল থাকবেন সকলে….



১।
কান্তা গতরাতে বেশ দেরি করে ঘুমোতে গেছে।এখন বাজছে সকাল দশটা পঁচিশ। তবুও ঘুম হয়েছে এরকম কোন ছাপ তার চেহারায় নেই। আজ সকাল এগারোটায় রাহাত এর সাথে তার দেখা হওয়ার কথা ছিল। এখন সে রেডি হয়ে গেলেও এগারোটার মধ্যে পৌছতে পারবে না। একবার ভাবল রাহাত মিছিমিছি এসে অপেক্ষা করবে ? করুক গে। সে আবার কাঁথা গায়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। তার ঘরের দেওয়াল ঘড়িটির শব্দ সে শুনতে পাচ্ছে। এর অর্থ তার ঘুম কেটে যাচ্ছে।
বেশ বিরক্তি লাগছে কান্তার। ভালো একটা ঘুম হওয়া খুব দরকার। নইলে সারাটা দিন তার খারাপ যাবে। তাকে দেখাবে উলুম্বুশের মতো। গালে ও কপালে দু-একটা ভাঁজ পড়বে। চোখের নিতে কালো দাগও পড়তে পারে। মনে মনে ভাবল, আচ্ছা, এত দুঃচিন্তা করার দরকার কি? দুঃচিন্তাহীন থাকার মধ্যে এক প্রকার মজা আছে। তবুও মানুষ এরকম থাকতে পারে না। সে দুঃচিন্তাহীণ এক মানুষের মত করে পাশ ফিরল।
মাঝে মাঝেই তার মনে হয় তার নাম কান্তা কেন রাখা হল ? ‘কান্তা’ –একটু বিদঘুটে টাইপের নাম তাই না ? অনেক চেষ্টার পরও সে ঘুমোতে পারল না। খাট থেকে নামল বেশ আয়েশ করেই। ঘুম ঘুম যা ভাব ছিল তা কেটে গেল নিমিষেই। বাইরের ঘরে তার বাবা খবরের কাগজ পড়ছে।
বাবা ডাকে, কান্তা, এদিকে আয় তো । তোর পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে ? কান্তা বলে, উহু ! বাবা বলে, উহু মানে কি ? কান্তা আবার বলে, উহু।এরপর আর কিছু বলে না।কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে চলে যায়। সে জানে তার বাবার মাথায় এখন সব আজগোবি চিন্তা আসবে। আমার মেয়ের কি হল ? মেয়ে সত্যি পরীক্ষা দিয়েছে তো ? নাকি আবার পরীক্ষায় ফেল করল ???????
এসব ভাবতে ভাবতেই কান্তা হেসে ফেলল। তার বাবা আজ সারা-রাত চিন্তায় থাকবে। সে ঠিক করল, সকালে উঠেই বাবাকে বলে দিবে, সত্য কথাটি। তার বাবা জানে, তার মেয়ে খারাপ রেজাল্ট করার মত নয়। বিছানায় শুয়ে কান্তা আবার গায়ে চাদর জড়িয়ে নিল।চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগল কাল সকালে যখন সে তার বাবাকে বলবে, বাবা, আমি এই সেমিস্টারে excellent award পেয়েছি। তার বাবা আনন্দে হাসতে হাসতে তাকে জড়িয়ে ধরবে, কপালের ঠিক মাঝখানে একটা চুমু খাবে। বাবার এই আদর কান্তার খুব প্রিয়। এসব ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে গেল।

২।
এই কান্তা কোথায় যাচ্ছিস ? কান্তার মা চিৎকার করে বলল।
কেন মা ? তোর বড় চাচা, মামা, খালারা সবাই আসবে আর তুই বাইরে যাচ্ছিস ? হ্যাঁ, আজ আমরা বন্ধুরা মিলে বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি। আর বাসায় মেহমান আসলেই যে বাইরে যাওয়া যাবে না এমন কোন কথা আছে নাকি ??
কান্তার মা অবাক হয়ে বলে, ঝগড়া করছিস কেন ?
কান্তা বলল, ঝগড়া করছি না, তোমায় বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করছি।তোরা কোথায় যাবি ?
আমরা কোথায় যাব জানতে চাইছ কেন ? এমনি জানতে চাচ্ছি। না, তুমি এমনি জানতে চাচ্ছ না। তুমি আমায় সন্দেহ করছো। আমি যে নি:শ্বাস ফেলি তুমি তাকেও সন্দেহ করছো।
একটা কাজ করো তো মা ! চট-জলদি শাড়িটা পালটে নাও। আকাশী রঙের শাড়িটা পড়ো তো। ওই শাড়িটা পড়লে তোমায় বেশ যুবতী লাগে। তুমিও আমাদের সাথে বেড়াতে যাবে। আমাদের সাথে ঘুরবে, গল্প করবে। মাঝে এক গ্লাস কোক নিয়ে একটু দূরে গিয়ে বসবে আর বাবার কথা ভাববে। আহা রে ! মানুষটা যে কি করছে ? সারাদিন সময়মত খাইল কি না ........!!!!!!
কান্তার মা বলে, তুই আমার সাথে এরকম করছিস কেন ? এরকম কি করছি মা ? কই চট-জলদি শাড়িটা পাল্টে নাও তো, দেরি হয়ে যাচ্ছে। কান্তার মা কাঁদতে লাগলেন। খানিকক্ষণ মায়ের কান্না দেখার পর কান্তা বেড়িয়ে পড়ল।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবল, আচ্ছা আমি এসব করি কেন ? মানুষকে এত জ্বালাই কেন ? পরক্ষণে ভাবল, আমি মজাপাই তাই জালাই। যার যা ইচ্ছে ভাবুক গে …….।


৩।
রাহাতকে কান্তা প্রশ্ন করল, আচ্ছা বিয়ের আগের রাতে কি সব মেয়ের-ই ঘুম আসে না ? রাহাত বলল, আমিতো জানি না। কান্তা বলে, কেউ না জানলেও তোমায় তো জানতেই হবে। তোমার সাথে আমার তিন বছরের সম্পর্ক। তোমার প্রতিটি খারাপ অভ্যাস আমি জানি। আমি এখন যাব। কান্তা বলে,কোথায় ?
জানি না। তবে এটুকু জানি যে আমি এখন যাব।কান্তা গম্ভীর সুরে বলে, আচ্ছা যাও……….. তোমার আমার সম্পর্কের এখানেই শেষ। আর আমাদের দেখা হবে না। আমায় ফোন করবে না।
রাহাত বলে, ঠিক আছে সুন্দরী ফোন করব না। কান্তা আরো রেগে গেল।
রাহাত প্রতিঙ্গা রাখতে পারল না। রাখতে পারবে না কান্তাও। ২৪ ঘন্টা হতে না হতেই রাহাত ফোন করল।
হ্যালো কান্তা একটা বিশেষ খবর আছে। কান্তা গম্ভীর হয়ে বলে, কি খবর ?
রাহাত খুব ভাব নিয়ে বলল, আমি প্রতিঙ্গা রাখতে পারি নি তাই আমি আমার একটা কান কেটে ফেলেছি। আশাকরি এখন তুমি আমার সাথে কথা বলবে। তুমি যেদিন চাইবে সেদিন আমার কানটা ফর্মালিন ভর্তি একটি বোতলে ভরে দিব। তুমি তোমার ছেলেমেয়েকে দেখাবে। ওরা খুব মজা পাবে।

৪।
যেমন করেই হোক আমার মা’কে তোমার পটাতে হবে। কি পারবে না কান্তা ??? আমি তো জানি না। তোমার তো অনেক বুদ্ধি। তোমার সব বুদ্ধি কি নাকের সর্দির সাথে বের হয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়েছে ??? কান্তা কিছু বলে না।
রাহাত বলে, নইলে কিন্তু আমাদের খবর আছে। একবার যদি মা তোমায় হজম করতে পারে তাহলে পরিবারের আর কেউ তাকে উগলে ফেলতে বলবে না।
কান্তা বলে, তুমি এভাবে কথা বলছো কেন ? আমি কি হজমি বড়ি নাকি ? আর তুমি কি ভুলে গেছ যে, আগামী কয়েকদিন পর তুমি ডাক্তার হবে। তখনও কি তুমি রোগীদের সাথে এভাবে কথা বলবে ??
তোমার মত রোগী পেলে তো এভাবেই কথা বলবো। রাহাত হাসতে থাকে। কান্তা তার ভুরু দুটো কুচকে তাকিয়ে আছে ………….।

৫।
প্রায় তিন মাস হয়ে গেল রাহাতের সাথে কান্তার দেখা নেই। ইচ্ছে করে নয়, সময়ের অভাব। রাহাত মেডিকেলের ছাত্র বলে একদম সময় পায় না। সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে ভুলেই যায় যে কান্তা নামের মানুষটির কথা। অবশ্য এসব নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। কারন তারা দু’জনেই জানে তারা দুজনে দুজনকে প্রচন্ড ভালবাসে।
রাহাতের কথাই ভাবছিল কান্তা। হঠাৎ তার মোবাইল বেজে উঠল্ সেই পরিচিত রিংটোন। অর্থাৎ রাহাত ফোন করেছে। হ্যালো কান্তা ?
কান্তা অভিমানী গলায় বলে, আজ কতদিন পরে আমার খবর নিচ্ছো জানো ? জানি,মাত্র সাত দিন পরে। তুমিতো বোঝ আমার ব্যস্ততা । খালি কি এই পৃথিবীতে তুমিই লেখাপড়া কর ?? তাতো জানি না। আচ্ছা একটা কবিতা শোনাই তোমায় :
প্রত্যহ পূর্ণিমায় আমার হৃদয় রাঙায় যে জ্যোৎনা
সে আমায় ছাড়ে না
ওই নীরব শিখার প্রজ্জলনে যে আমি নি:শেষ হয়ে যাব…….
কোথায় যাব আমি ?
অনুগ্রহ করে ঠাঁই দাও মোরে …………।

কবিতা শেষ হতেই রাহাত ফোনটা কেটে দিল।

৬।
মিতা নামে কান্তার খুব ভাল এক বান্ধবী রাহাতকে দেখার জন্য অনেকদিন ধরেই বেশ ধরেছে। আজ না হয় রাহাত এর সাথে তার দেখা করিয়েই দিই। মিতা আর কান্তা তাদের প্রিয় পার্কটার প্রিয় জায়গায় বসে আছে। বাদাম খাচ্ছে আর বিয়ের গল্প করছে। এই বয়সে মেয়েরা সাধারণত যা করে। দেখতে দেখতে ১ ঘন্টা হয়ে গেল কিন্তু রাহাতের পাত্তা নেই।
মিতা বলল, আজ আমায় উঠতে হবে রে। কাজ আছে। অন্যদিন দেখা করব।
অবশেষে বিকেল ৬ টার দিকে রাহাত আসল । কান্তাতো রেগে একেবারে আগুন। হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাহাত বলল, আমি বৃষ্টিতে ভিজব। তুমি কি আসবে ? কান্তা কিছু বলে না।
সে একটি দোকানের ভিতরে দাড়িয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় আছে। হঠাৎ রাহাত রাস্তায় গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজা শুরু করল।কান্তা এই সব পাগলামি দেখে বলল, বৃষ্টিতে ভিজছ কেন ? রাহাত বলল, অনেকদিন বৃষ্টিতে ভিজা হয় না, কথাটা আজ মনে পড়লো তো তাই। চল দুজনে ভিজি।
তুমি পাগল হতে পার কিন্তু আমি না। এতগুলো মানুষের সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে ভিজব। আর লোকজন দেখবে আমার কাপড় ভিজে গায়ের সাথে লেপটে আছে। এটা কি ভাল হবে ???
রবীন্দ্রনাথের ওই গান টা মনে কর তাহলে :
এসো নীপবনে ছায়াবীথী তলে এসো
কর স্নান নবধারা জ্বলে।
তোমার ভিজতে মন চাইবে।কান্তা যায় না। তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে দেখে রাহাত ভিজছে। দু’হাত প্রসারিত করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা নিজের সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে অনুভব করছে।

৭।
রাস্তায় দাড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে কান্তা। আজ বেশ রৌদ্র। আবহাওয়াটাও বেশ গরম। দুপুরের দিকে এই এক সমস্যা। রিক্সা পাওয়া যায় না। পেছন থেকে একটা কন্ঠ শুনতে পেল কান্তা।
আপা ভালা আছেন ??? কান্তা তাকিয়ে দেখল, ৮ বছর বয়সী একটি ছেলে দাড়িয়ে আছে হাতে তার একটি ফুলের তোরা। ছেলেটা আবারো জিজ্ঞেস করে, “ আপা ভালা আছেন” ?
কান্তা বলে, হ্যাঁ। আপা আমার এই ফুলের তোরাটা আপনি দয়া করে কিনবেন ? আপা না করবেন না দয়া করে। আমি গতকাল দুপুর থেকে কিছুই খাই নি। ছেলেটার কথা শুনে কান্তার বেশ মায়া হল। নারী মানেই তার মাঝে মায়া, মমতা আর ভালবাসা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই মায়া নামক জিনিসটা স্রস্টা নারীদের পৃথিবীতে আসার আগেই তাদের মনের মধ্যে সৃষ্টি করে দেন।
চল আজ তোমাকে আমি খাওয়াব। ঐ ছেলেটিকে নিয়ে কান্তা স্টার কাবাবে গেল। বলল, যা খেতে ইচ্ছে করে তাই খাবে। টাকা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। তুমি খাবে আর আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার খাওয়া দেখব।
চোখ ভিজে যায় ছেলেটির। সে বলে আফা, এহন হয়ত আমি ৫০০ টাহার খাবার খাইমু এহা। আহচ আপনি কি জাইনেন, এই ৫০০ ডা টাহা পাইলে আমি তার মইধ্যে ২০০ টাহার বাজার করমু, জমাইনো কিছু টাহা আর বাকি টাহা দিয়া আমার ছোট দুইডা বইনের জন্য বই কিনতাইম।
সাথে সাথে কান্তা মাথা নিচু করে ফেলে। চারদিক আলোয় ভরপুর কিন্তু তারপরও তার সবকিছু ঝাপসা লাগছে। চোখ ভর্তি জ্বলে সে ঝাপসা দেখছে। ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে সে চোখ মুছতে লাগল………..।

৮।
সারাদিন কেটে গেল অথচ একবারও আকাশ দেখা হয় নি। আনমনে আকাশের দিকে তাকায় কান্তা। জোনাক জ্বলা আকাশ।সে ভাবে হয়ত এই সময় ঐ ছেলেটি ফুল বিক্রি করছে।
প্রতিরাতে ঘুমোতে যাবার আগে কান্তা আকাশ দেখে আর স্বপ্নের কথা ভাবে। যদি সে জীবনে অনেক ধনী হয় তাহলে সে একটি ট্রাস্ট খুলবে। যেখান থেকে গরীব-দু:খী মানুষদের সাহায্য করা হবে। একটা খাবারের হোটেল দিবে। যেখানে ক্ষুধার্ত মানুষ তৃপ্তি সহকারে খাবে। আর কান্তা, তাদের তৃপ্তি সহকারে খাওয়ার ছবি ক্যামেরায় বন্দি করে রাখবে। সহযোগিতা করা হবে সে সব পিতাকে যারা তাদের মেয়ের বিয়ে দেওয়ার টাকাটা শত চেষ্টা করেও জোগাড় করতে পারে নি, মাথা গোজানোর ঠাই করতে সাহায্য করা হবে সেই সব মানুষকে যারা অভাবের তারনায় তাদের শেষ সম্বল বসত-ভিটা বাড়িটি পর্যন্ত মহাজনের কাছে বন্ধক রেখেছে। কারন কান্তা জানে, জীবনের অর্থ কত কঠিন, মেয়ের বিয়ে দেওয়া কত কষ্টের, ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্টের তীব্রতা কতটুকু……………
সক্রেটিজের দু:খজাগানিয়া কথাটা তার মনে পড়ে যায় :
“ I to live, you to die. Which is better ? Only God knows……”
এই কথাটা ভাবতে ভাবতে তার চোখ ভিজে আসে। রাতের নিস্তবদ্ধতাকে মাড়িয়ে সে আকুল হৃদয়ে আকাশের ওপাশে থাকা স্রস্টার কাছে প্রার্থনা করে, তার স্বপ্নটির দিকে যেন স্রস্টা একটু হলেও ফিরে তাকায়…….। স্রস্টার কাছে প্রার্থনার পর কান্তা টের পায় তার মন এখন ভীষণ খারাপ। মুহুর্তে সে একা হয়ে যায়, পৃথিবীর সমস্ত কিছু থেকে একদম একা।
মানুষের শত ব্যস্ততা আর হাজারো কপটতা শেষে রাতের এই একাকীত্ব কান্তা’র পছন্দের। সে ভাবে, নিরন্তন বায়ু দূষণ এর পরেও আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি, সবুজ পাতা আর লাল নীল ফুলের মাঝে উল্লাসিত প্রজাপতি দেখতে পাচ্ছি, ভরা আকাশ, লেজ নাচানো পাখির মন কেমন করা ডাক শুনতে পাচ্ছি,বেলী ফুলের মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি, রাহাত এর মত একটি স্নিগ্ধ মানুষকে ভালবেসে যেতে পারছি………। আমিতো ভালই আছি………..।

৯।
একটু আগে মিতার সাথে ফোনে কথা হল।কেমন যেন উদ্ভ্রান্তের মত কথা বলছিল সে। বারান্দায় বসে কান্তা মিতার জন্য অপেক্ষা করছিল। মিতা হঠাৎ দপদপ শব্দ করে এসে কান্তার হাত ধরে বলল, চল তোর ঘরে যাই।
কান্তা বলে, এখানে বল না। না, এখানে না, জরুরী কথা আছে। মিতা খিলখিল করে হাসতে থাকে। কান্তার বিছানায় সে বেশ আয়েশ করে বসেছে। তারপর নিজের দু’হাত দিয়ে কান্তার দু’গাল চেপে ধরে। তোকে একটা জরুরী কথা বলব, শুনে তুই মূর্ছা যেতে পারিস, আবার কষ্টে হার্টফেইল করতেও পারিস।
কান্তা বলে, না আমি এগুলোর কোনটিই করবো না। তোর কথাটা বল। বলতে যেন কেমন লাগছে। তাহলে বলার দরকার নেই। দুই হাত নিজের চোখদুটোর উপর রেখে মিতা বলে, আমাদের কিছু বন্ধু আমার খুব বড় একটা উপকার করেছে। আমি ভেবে অবাক এত বড় উপকার তারা কিভাবে করতে পারল !!! আমার বিয়ের যে প্রস্তাব এসেছিল, সেই ছেলেটি আমার বিষয়ে জানার জন্য আমাদের বন্ধুদের সাথে কথা বলেছিল। তারা কি বলেছে জানিস ???
আমি নাকি সারা দিন ছেলেদের সাথে কথা বলি, কিছুদিন পর পর বয়ফ্রেন্ড পাল্টাই, মানুষের প্রেম ভেঙ্গে দেই, মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করি। আমার চরিত্র নাকি কলুষিত।
কী !!! খুব চিৎকার করে বলে কান্তা। !!!
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মিতা বলে, আমার বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে।
মিতা হাসতে থাকে। বিভ্রান্তিকর তার হাসি। কান্তা ওর হাসিটা অনুভব করার চেষ্টা করে- এটা কিসের দু:খের নাকি অভিমানের ?? হাঁসতে হাঁসতে মিতা কান্তাকে জড়িয়ে ধরে। ঠিক তখনই কান্তা বুঝে যায় হাসিটা অন্যকিছুর। মুহুর্তের মধ্যে মিতা বেদনায় নীল একেবারে নীল হয়ে গেল। তার মনে আজ বাধ ভাঙা কান্নার আওয়াজ।
মিতা কান্তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, কান্তা আমার বুক ছিঁড়ে তোকে দেখাতে পারলে তুই বুঝতি, সেখানে দাউদাউ করে জ্বলছে কষ্টের আগুন। আমার বুকে কান পাতলেই শুনতে পাবি প্রবল স্রোতের আঘাতে নদীর তীর ভাঙার মত কান্নার আওয়াজ, পাঁজর ভাঙ্গার মত ব্যথা।
কান্তা কিছু বলে না। নীরবে মিতার কষ্টটা অনুভব করার চেষ্টা করছে। মনে মনে বলে, একদিন আমার সাথেও আমার বন্ধুরা এমন করেছিল। আমিও যে কত রাত কান্নায় বুক ভাসিয়ে জাগ্রত থেকেছি তা আমিই জানি।
জগত বড়ই রহস্যময়। এখানকার সবকিছুই রহস্যের বেড়াজালে বন্দি। এখানে সব মানুষকে যেমন চেনা যায় না, তেমনি সবকিছু বোঝাও যায় না। বুঝতে চাওয়াটাও ঠিক না। কারন, এতে কেবল কষ্টই বাড়ে।

১০।
লেখাপড়া আর আমার ভাল লাগে না। সেমিসটার শুরু হলে আর শেষ হওয়ার খবর নাই। ধুর, ভালো লাগে না। বারান্দায় দাড়িয়ে গ্রিলের উপর হাত রেখে ঐ দূর নীলিমার দিকে তাকিয়ে কান্তা একা একাই এসব কথা বলছে। হঠাৎ তার বড় খালামণি এসে বলে, কান্তা, চা খাবি ? হ্যাঁ, খাব। কিছুক্ষণ পর বড় খালামণি চা নিয়ে আসে। চা খেতে খেতে বলে, তোর জন্য একটা সুখবর আছে। আগামীকাল তুই বাড়ি যাচ্ছিস। তোর টিকিট করা হয়েছে। কান্তা, উচ্ছাসিত হয়ে বলে, সত্যি ??? হ্যাঁ, সত্যি। আনন্দে সে তার খালামণিকে জড়িয়ে ধরে।
এই কান্তা, তুই কোচ স্ট্যান্ডে কিভাবে যাবি ? তোর কোচ তো রাত ৮ টায় ! হয় একাই যাব না হয় খালু পৌছায় দিয়ে আসবে। কোচে উঠে কান্তা প্রথমে তার মা’কে ফোন দিয়ে বলে, মা আমি বাড়ি আসছি। মা বলে, সাবধানে আসিস মা। এরপর সে তার নানু কে কল দেয়। নানুভাই, কি করছো তুমি ? কিছু নারে পাখি।শুয়ে আছি। আমি আজ বাড়ি আসছি। পৌছতে পৌছতে রাত ৩ টা বাজবে। আমাদের এখানে নামবি নাকি মা-বাবার সাথে দেখা করতে যাবি ? তোমাদের ওখানে আগে না নেমে আমি কোনদিন মা-বাবার সাথে আগে দেখা করেছি বল ? না, করিস নি। আচ্ছা তোমরা খেয়ে শুয়ে পড়।
কোচ চলছে। জানালার ফাঁকা দিয়ে বাতাস এসে কান্তার চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। যেদিন কান্তা বাড়ি রওনা দেয়, যাওয়ার সময় এই বাতাসটাকেই তার বড় আপন আর মোহময় মনে হয়, আবার যেদিন সে বাড়ি থেকে ঢাকা আসে সেদিন তার কাছে আবার এই বাতাসটাই বড্ডবেশি বিরক্তির মনে হয়। সেদিন তার কিছুই ভালো লাগে না। কেবলই বিষন্নতায় ডুবে থাকে তার মন। রাত প্রায় ৩টা বেজে গেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই কান্তা তার প্রিয় পরিবেশে পৌছবে। ভাবতেই তার শরীর আনন্দে শিউরে উঠছে। কোচ থেকে নেমেই কান্তা হকচকিয়ে গেল। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। মনেহয় যেন তার হৃদয় স্পন্দন থেমে গিয়েছে অথবা সময় আটকে গিয়েছে। এখন রাত ৩টা ১৭ মিনিট ঘড়িতে। তাকে কোচ ষ্ট্যান্ডে নিতে তার নানু, নানী, ছোট মামা এসেছে। এই বৃদ্ধ মানুষ দুটি না জানি কখন থেকে দাড়িয়ে আছে !!!!!
নানু, নানির কাছে গিয়েই কান্তা বলে, এত রাতে তোমরা এখানে ??? হ্যাঁ, তোকে নিতে এসেছি। তুই আসবি এই আনন্দে ঘুম আসছিল না। তাই বুড়ো-বুড়ি চলে এসেছি। নানু-নানিকে দেখে কান্তার বেশ মায়া হল।সত্যি ওর নানু-নানি ওকে কতটাই না ভালবাসে !!!! সে তার নানু-নানিকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কাঁদতে থাকে আর বলে, তোমাদেরতো বয়স হয়েছে। বোঝো না কেন ? নানী বলে, আমাদের বুঝতে হবে না রে বুড়ি, তুই বুঝলেই চলবে। তুই ঢাকা গিয়েছিস বা ঢাকা থেকে এসেছিস আর আমরা কোচ স্ট্যান্ডে আসি নি এমনটি কি কখনো হয়েছে পাখি ?
কান্তা বলে, না হয় নি বল তোমরা হতে দাও নি। হঠাৎ মামা বলে, তোমাদের নানী-নাতনির এই ড্রামা সিরিয়াল শেষ হলে চল এবার বাড়ি ফেরা যাক …..।
বাড়িতে ঢুকতেই সে আবারও অবাক গেল। তার মেজো খালা হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা ফুল হাতে দাড়িয়ে আছে। কান্তাকে দেখেই বলে, ওয়েলকাম সোনাপাখি। ছোটন তুমি !!!!!!!!!!!!!!
হ্যাঁ আমি। কবে আসলে ? আমাকে তো কেউ বলে নি ! হ্যাঁ, তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। কান্তা কথা শেষ না হতেই দৌড়ে গিয়ে ছোটনকে জড়িয়ে ধরল। তোমায় বাড়িতে পাব আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। মেজো খালা কান্তার কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিল। সেই ছোটবেলা থেকে কান্তা তার নানুবাড়িতে মানুষ হয়েছে। স্কুল, কলেজ সব এখান থেকে। এতটা বছর যে মানুষটি তার প্রতিটি জিনিসের অসীম মমতা নিয়ে খেয়াল রেখেছে তা হল তার মেজো খালা যাকে সে ছোটন বলে ডাকে। বলতে গেলে, নিজের ছোটবোনের চেয়েও বেশি, নিজের সন্তানের মত করেই মানুষ করেছে তাকে, বোকেছে তেমনি আদরও করেছে। কান্তার কত ভুল যে সামান্য একটা হাসি দিয়েই ক্ষমা করে দিয়েছে !!! কান্তার অসুখের সময় কত রাত যে জাগ্রত থেকেছে ! কান্তার মন খারাপ থাকলে বা কষ্টের সময়গুলোতে নিজের বুকের একেবারে গভীরে অসীম নির্ভরতায় ঠাঁই দিয়েছে………।
ছোটন বলে, এবার ফ্রেশ হযে নে। পরে অনেক গল্প করা যাবে।
কান্তা আর খালা একই বিছানায় শুইলো। কান্তা আগের মতই ছোটনকে জড়িয়ে ধরল। ছোটন বলে, আগের অভ্যাসের দেখি একটুও পরিবর্তন হয় নি। কান্তা বলে, উহু। কান্তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ছোটন বলে, আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুই ঘুমা।
৩ দিন হয়ে গেল অথচ কান্তার ওর মা-বাবার কাছে যাওয়ার কথা মনেই নেই। তাই মা-বাবা কান্তাকে নিজেই নিতে এসেছে। অথচ কান্তা চলে যাবে তাই সকাল থেকেই সকলের মন খারাপ। কান্তা আসলেই বাড়িটা যেন জমে উঠে। সারাদিন লাফাঝাপা, চিল্লাচিল্লি করে তেমনি মাতিয়ে রাখে বাড়ির সবাইকে। চলে যাওয়ার আগে সে বাড়ির কারো দিকেই চোখ তুলে তাকাতে পারে না। কান্তা জানে,এই বাড়ির সকলে তাকে বড় ভালবাসে। চোখের পাতায় রাখে। তাদের এই ভালবাসার মূল্য কান্তা কখনোই দিতে পারবে না। আরেকবার জন্ম হলে কান্তা তার শৈশব আর কৈশরের দিন গুলো এই সকল কাছের মানুষগুলোর সাথেই কাটাতে চায়। এই সব মানুষগুলোর আনন্দে আর বেদনার মাঝেই আবেগে ভাসতে চায়। চলে যাওয়ার আগে সে ছোটনকে জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি কি জান ছোটন আমি তোমাদের সকলকে অনেক ভালবাসি। আমি তোমাদের সকলকে অনেক হ্যাপি রাখতে চাই। তুমি কি এই কথাটা সবাইকে গিয়ে একটু কানে কানে বলে দিবে…………?

১১।
ছাদে বসে আছে কান্তা। চুল আছড়াতে আছড়াতে সে গান গাইছে,
‘ভালবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো………..’।
হঠাৎ রাহাত এর ফোন আসে। হ্যালো কান্তা ? হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, আমার না……….। আমার না………। কান্তা বলে, আমার না কি ? বলতো। কান্তার টেনশন হচ্ছে, তার শ্বাস গরম হচ্ছে। আড়মোরা ভেঙে রাহাত ক্ষীণ স্বরে বলে, আমার না কিছু হয় নি। একা একা লাগে। তোমায় খুব মনে পড়েছে। ওই যে, একান্নবর্তী নাটকে ছিল না মেন্টাল বাহাদুর ? মনে পড়েছে ? ওই মেন্টাল বাহাদুরের মত আমারও একা একা লাগে।
কান্তা বলে, তুমি মাঝে মাঝে এমন পাগলের মত কথা বল কেন ? তখন হাঁপাচ্ছিলে কেন ?
যাতে তুমি ভয় পাও। খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পর কান্তা বলে, আমাকে এত জালাও কেন তুমি ? কি মজা পাও ? রাহাত বলে, মজা তো পাই তাই জ্বালাই। তোমায় রাগাতে বেশ ভাল লাগে। আচ্ছা, প্রশুন কেমন আছে ? ভালো।
রাহাত বলে, আজ সকালে না আমি ক্লাস মিস করেছি। পরপর দুটো ক্লাস। কেন মিস করেছো ? তা তো বলা যাবে না। আহা ! বল না। আমার সব মেয়ে বান্ধবীর সাথে গল্প করেছি। গল্প করতে করতে দ্বিতীয় বর্ষের এক মেয়ে আসে বলে, ভাইয়া একটু এদিকে আসবেন ? আপনার সাথে কিছু কথা ছিল। আমি এগিয়ে গেলেই সে মাথা নিচু করে বলে, আমি আপনাকে ভালবাসি, খু-উ-ব।
হ্যাঁলো কান্তা, তুমি কি শুনতে পাচ্ছো ? কিছুক্ষণ থেমে কান্তা বলে, পাচ্ছি। ঐ মেয়েকে তুমি কি বলেছ ?
কি আর বলব, বললাম আমায় ভাবার কয়েকটা দিন সময় দাও। কান্তা, তুমি কি রেগে যাচ্ছ ?
কান্তা, আমি না ফ্যান এর নিচে বসেই কথা বলছি অথচ প্রচন্ড গরম লাগছে আমার ! মনেহয় তুমি রেগে গেছ ?? তারপর কি হয়েছে শুনই না। আমি বলেছিলাম না, সুমি নামের আমার এক সুন্দরী বান্ধবী আছে, আমায় ভীষণ ভালবাসে। সে না আজ আমায় একটা পারফিউম গিফট দিয়েছে। কি যে সুন্দর ঘ্রাণ আর কি বলবো……..।
কান্তা বলে, রাহাত আমরা পরে কথা বলি ? কেন, ভালো লাগছে না ? কান্তা বলে, না। আমি না ওপাশ থেকে পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। কে যেন হিংসার আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা সেই মানুষটি কি তুমি ??? কান্তা প্রচন্ড রেগে কলটা কেটে দেয়।আর ওপাশ থেকে খিলখিল করে রাহাত হাসতে থাকে। কাঁদো কাঁদো ভাব চলে এসেছে কান্তার মাঝে। চোখের কোণা দিয়ে দু’ফোঁটা পানিও পড়েছে। হঠাৎ একটা এসএমএস আসে।
রাহাত লিখেছে,
‘I wouldn’t say u r the best, I wouldn’t say u r the most beautiful or compare u with the moon or sky. I just wanna say, u r the one for me and u’ll be for me. U are what u r in me. তোমায় এতক্ষণ যা বলেছি সব তোমায় রাগানোর জন্যই। রাগ করো না সোনাপাখি। তোমার কপালে আলতো করে ছুয়েঁ দিলাম। এবার একটু হাসো তো ???’’
এসএমএসটা পড়ে সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে রাহাত কে কল দেয়। কিন্তু রাহাত এবার মোবাইলটা বন্ধ করে রেখেছে কান্তাকে আবার জালানোর জন্য।
কান্তা বেশ উচ্চস্বরে বলে, ‘ওহ খোদা, আমি এখন কি করব ওকে’ ???

১২।
আজ প্রায় চারমাস পরে রাহাত এর সাথে কান্তার দেখা হচ্ছে। রাহাত কান্তাকে দেখা মাত্রই বলে, কেমন আছো প্রেয়সী ? ভালো।তোমার মত মনভোলা মানুষটিকে আমি ভালবাসি,যার নাকি মাঝে মাঝেই একা একা লাগে। এটাতো আমার সৌভাগ্য। আমি ভালো না থাকলে কে ভালো থাকবে বল ? এবার খুশি ?
রাহাত তার মাথাটা বাম পাশে হেলিয়ে শিশদের দুষ্টুমির ভঙ্গিতে বলে, খুশি। তা আমার জন্য কি খাবার এনেছো ???
কান্তা বলে, এবার কিছু আনতে পারি নি। আমার সাথে যেবারই তুমি দেখা করতে এসেছো সেবারই তুমি কিছু না কিছু বানিয়ে নিয়ে এসেছো আমি জানি, অতি যত্ন করে বানাও তুমি; তোমার ভালবাসা মাখানো খাবার খেয়ে ঘুময়ে পড়ি আমি ।
কান্তা বলে, ঘুমিয়ে পড় মানে কি ? ঘুমিয়ে পড়ি মানে আনন্দে ঘুমিয়ে পড়ি।
কান্তা তার ব্যাগ থেকে একটা প্লাস্টিকের বাক্স বের করে রাহাতকে দেয়। রাহাত বাক্স খুলতেই দেখে, তার প্রিয় টক আচার। কে বানিয়েছে ? কান্তা বলে, আমি ।
তুমি আচার বানাতেও পারো ??? ওরে বাপ !!!!!!!!!!!!!!

এবার কান্তা খানিকটা রেগে যায়। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলে, যতদিন খাবার নিয়ে এসেছি বাক্সে করে, সেই বাক্স আর আমার কাছে ফেরত আসে নি। হাসতে হাসতে রাহাত বলে, সব বাক্স গুলো আমি অতি যত্নে রেখেছি। তোমার বিয়েতে উপহার দিবো। আমার টাকাটা বেঁচে যাবে………..। হা, হা হা ।
রাহাত বেশ মনোযোগ সহকারে আচার খাচ্ছে। আর কান্তা মুগ্ধ নয়নে দেখছে তাকে। এই সুখটার মূল্য কান্তার কাছে অনেক বেশি। হ্যাঁ, অনেক বেশি।

১৩।
আজ ১২ই নভেম্বর। কান্তার জন্য বিশেষ দিনই বটে। আজ কান্তার ভার্সিটিতে কনভোকেশন। বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে সে আগেই। আজ ভার্সিটি থেকে স্বীকৃতি ও সম্মান সূচক সার্টিফিকেট পাবে সে। ঠিক করেছে, ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে রাহাত এর সাথে দেখা করে তবেই যাবে……….।
রিক্সায় করে কান্তা যাচ্ছে, অথচ তার মনে হচ্ছে সময় যেন কাটছেই না। সে জানে, আজও রাহাত আগে এসে তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে। রিক্সা থেকে নামতেই রাহাত কান্তার দিকে তাকাল।
অপূর্ব মমতায় সে আজ নিজেকে সাজিয়েছে। আকাশী রঙের শাড়ি, কপালে ছোট্ট টিপ পড়েছে, চোখে হালকা কাজল দিয়েছে। সাথে বাম হাতে কাচের চুড়িও পড়েছে। রাহাতের কাছে এসেই কান্তা রাহাতের চোখের দিকে তাকাল। দু’জনে দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ নয়নে…….। চোখের পাতা কেউ নামিয়ে নিচ্ছে না, এটা যেন একটা খেলা। যেই নামিয়ে নিবে সেই হেরে যাবে। অবশেষে পরাজিত হয় রাহাত। চোখ নামিয়ে কোমল গলায় বলে, অভিনন্দন কান্তা। এই ফুলগুলো তোমার জন্য।
রাহাত বলে ওঠে,
“ আমি ক্লান্ত প্রাণ এক
চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন
আমারে দু’দন্ড শান্তি দিয়েছিল
নাটোরের বনলতা সেন”।

আর আমার জীবনের বনলতা সেন কে জানো ??? কান্তা অধীর আগ্রহ নিয়ে বলে, কে ?
রাহাত বলে, তুমিই কান্তা…………..

আবারও তারা দু’জনে দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখে তাকিয়ে থাকার পূরণো খেলা। এই খেলায় আজ প্রথম বারের মত কান্তা হেরে যাবে। কারন তার চোখে পানি জমতে শুরু করেছে। রাহাত বলে, কাঁদছ কেন ?
কান্তা বলে, আনন্দে। তোমার মত ভালো একটি মানুষের ভালবাসা পাওয়ার আনন্দে। যার প্রতিটি চিন্তায় এমনকি অস্তিত্ব জুড়ে থাকে কান্তা নামের অতি সাধারন মেয়েটির গাঢ় উপস্থিতি আর ছোঁয়া।আমি তোমার কাছে কৃতঙ্গ রাহাত………..।

এভাবেই কখন যে ৪৫ মিনিট পার হয়ে গিয়েছে কেউ বলতে পারে নি।কান্তাকে এখন যেতে হবে। খানিকক্ষণ পরে সে গ্র্যাজুয়েশনের সার্টিফিকেট নিবে। তারপর শুরু হবে নতুন পথচলা। যেই পথচলায় সে রাহাতের হাত ধারেই পাড়ি দিবে বাকিটা পথ।
রাহাত বলে, চল তোমায় রিক্সা ঠিক করে দেই। কান্তা বলে, না। আমি খানিকটা পথ হেঁটে যাব।এই বলে কান্তা হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে ভাবে, আমি জীবনে আমার পরিবার সহ আরো কিছু কাছের মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা পেয়েছি। এই জগতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা এত ভালবাসা সারা জীবনেও পায় না। আমার এই সকল কাছের মানুষগুলোর জন্যই আমার পথচলা, তাদের ছাড়া আমার জীবনটা সত্যি অসম্পূর্ণ……..।

আমি জানি, রাহাত এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে বুকভরা ভালবাসা আর একরাশ স্বপ্ন নিয়ে। কিছুদূর হেঁটে যাওয়ার পর হঠাৎ দাড়িয়ে কান্তা অসীম আগ্রহ নিয়ে মুখ ফিরে তাকাল। রাহাত এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। চলে যাওয়ার সময় মুখ ফিরে তাকাতে নেই। তাতে মায়া বাড়ে। কান্তা সেটা জানে। আর জেনে শুনেই সে ফিরে তাকায়…..।
আর মায়া বাড়তে থাকে তাদের মাঝে…… একটু একটু করে.......চাদেঁর কলার মত.......

Thursday, December 16, 2010

সুযোগ ???

বাবা আজকে তো ছুটির দিন। আমিও তোমার সাথে বাজারে যাব।
ঠিক আছে, চল তাহলে। এই যে, বাজারের ব্যাগটা হাতে নে।
শোন, তোকে আমি তোর আনিস চাচার দোকানে রেখে বাজারগুলো করে আনব। তারপর দু’জনে একসাথে বাড়ি ফিরব।
হিরা বলে, ঠিক আছে বাবা।
আনিস, কেমন আছ ? ও বজলু । ভালো। তুমি কেমন আছ ? ভালো আছি।
ও মা ! দেখি আমার মামুনিও এসেছে !!! হ্যাঁ।
আসসালামু আলাইকুম চাচা।
ওয়ালাইকুম সালাম। আস মা, ভিতরে আস।
ওকে রেখে গেলাম। আমি বাজার গুলো করে আসি।
আনিস সাহেব বলে, বোস মা, এই চেয়ারে বোস। চকলেট খাবে ?
হিরা বলে, হুঁ খাব। এই হাবিব, হিরার জন্য কিছু চকলেট কিনে আন তো।
মা তোমার লেখাপড়া কেমন চলছে ? ভালো চাচা।
এরপর প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পর বাজার করে বজলু সাহেব এসে বলে, আনিস বাড়িতে আস না কেন ?
আসব দোস্ত। একটু সময় পেলেই আসব । বোঝ তো, সারাদিন দোকান-দারি করি।
বজলু সাহেব বলে, আসি তাহলে। চলরে মা, আমার হাতটা ধর।
হিরা দোকান থেকে বের হয়ে তার বাবার হাত ধরে হাঁটতে থাকে।
হঠাৎ একটু দূরে জটলা দেখে বলে, বাবা ! মানুষগুলো জটলা পাকিয়ে আছে কেন ?
বজলু সাহেব বলে, চলতো কাছে গিয়ে দেখি ।
কাছে গিয়েই বজলু সাহেব দেখতে পান, মানুষগুলো ১২ বছরের একটি ছেলেকে মারছে।
ছেলেটির হাঁটু ছেল্লা গেছে, কপাল ফেঁটে রক্ত বেরুচ্ছে।
বজলু সাহেব জিঞ্জেস করে, কি হয়েছে ভাই ?
হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে একজন মানুষ বলে, আমার ৫০০ টাকা পকেটমেরে নিয়ে নিয়েছে এই বেটা পকেটমার। বেটা নাকি মায়ের ঔষধ কেনার জন্য পকেট মেরেছে।
কথাটা শুনার পর বজলু সাহেব ভিড় থেকে বেরিয়ে হিরার কাছে আসে।
বাবা, উনাকে কি মানুষগুলো মেরেছে ? হ্যাঁ রে মা। কেন ?
ছেলেটা একটা মানুষের পকেট থেকে ৫০০ টাকা চুরি করেছে তো তাই।
উনার কপাল দিয়েতো রক্ত পড়ছে !!! বজলু সাহেব বলে, চল এসব আর দেখতে হবে না।
পিছন ফিরতেই দেখে আনিস সাহেব এসে দাঁড়াল। কি হয়েছে বজলু ?
কি আর ! পকেটমার ধরা পড়েছে আর সাধারন মানুষ বেদম পিটুনি দিয়ে রাগ ঝাড়ছে। ৫০০ টাকা চুরি করেছে মায়ের ঔষধ কেনার জন্য। ছেলেটাকে দেখে মনে হল, এবারই প্রথম চুরি করেছে।
আনিস সাহেব বলে, ওর মত কত অসহায় মানুষ আছে যারা কাজের সন্ধান না পেয়ে চুরির আশ্রয় নেয় !!
বজলু সাহেব বলে, অথচ দেখো এই পকেটমার, চোর আর ভন্ডদের সাথে আমাদের সাধারন মানুষের চেহারা কোনই পার্থক্য নেই।
কি আছে নাকি ? আনিস সাহেব বলে, না নেই।
সামান্য ৫০০ টাকা চুরির জন্য ছেলেটা গণপিটুনি খেল। তাও আবার মায়ের ঔষধ কেনার জন্য। বেশ মায়া লাগছে।
বজলু সাহেব বলে, আমারও মায়া লাগছে। অথচ তাদের জন্যে আমাদের ঘৃণা জন্মায় না যারা লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েও খেলাপি করে ইচ্ছে করে। তাদের প্রতি ঘৃণা জন্মায় না যারা ভোটের আগে সাধারন মানুষকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের স্বপ্ন ভাঙে, কর ফাঁকি দেওয়া শিল্পপতিদের ওপর, সরকারি হাসপাতালে সময় না দিয়ে বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা ডাক্তারদের ওপর, খাদ্যে ভেজাল দেয়া এমনকি অকারনে দাম বাড়িয়ে বড় মুনাফা অর্জন করা ব্যবসায়ীদের ওপর.....।
কিছুক্ষণ থেমে আনিস সাহেব বলে, কেন ঘৃণা জন্মায় না জানিস ?
তারা এই সমাজে ভালো মানুষ সেজে বসে থাকে। দামি গাড়িতে চড়ে। গোপনে মানুষের বড় ক্ষতি করে অথচ সামনা সামনি তার সাথে হেসে হেসে কথা বলে। আমাদের মত সাধারন মানুষদের চেহারার সাথে এদের কোন পার্থক্যই নেই।
বজলু সাহেব বলে, আজ বিজয় দিবস না ?
হ্যাঁ, আজ বিজয় দিবস। তবে সমাজের এইসব মুখোশ পড়া মানুষগুলোর জন্য বিজয় শব্দটা আমাদের কাছে উপহাস হয়েই আছে।
আনিস সাহেব বলে, আমরা যদি এই বিজয় দিবসকে মানবিকতায় মানবিক হওয়ার এবং জেগে ওটার একটা সুযোগ হিসেবে নিতাম !!!!!!!!!!!!
তাহলে আমরা আগামী দিনে ভালো কিছু পেতাম। কিন্তু আমরা এটাকে সুযোগ হিসেবে না নিলেও কি হবে, ওই সব মুখোশধারী মানুষগুলোতো সুযোগটা নিয়েছে।
আনিস সাহেব করা সুরে বলে, তারাতো নিয়েছে প্রতারনা করার, মানবতা বিরোধী কাজ করার, দেশটাকে ভঙ্গুর একটা রাষ্ট্রে পরিণত করার সুযোগ হিসেবে .....। তবুও তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা জন্মায় না !!!!!!!!!!!!!!

Monday, October 25, 2010

একজন কাছের মানুষ !

৪ মাস আগের কথা। আমি ১০ দিনের ছুটিতে দেশে গিয়েছি। একদিন আমি,কনক,প্রতিম আর সজীব চারজন মিলে মিরপুর কাজীপাড়া যাচ্ছি বাসে করে। কনক-আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুর একজন ,সজীব আমার অতি প্রিয় আর কাছের একজন ছোটভাই, আর প্রতিম ? সেও আমার প্রিয় এক ছোট ভাই, সাথে সাথে আমার সাংগঠনিক বন্ধু।রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম দেখে আমরা ফার্মগেট থেকে হাঁটতে শুরু করি। সামনে সজীব আর প্রতিম এবং পেছনে আমি আর কনক। হাটছি আর গল্প করছি। কত যে গল্প……….!!!!!!! এই গল্প থেকে আবার সেই গল্প। কাজীপাড়ার বাসায় সজীবের কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিক করলাম সুমন ভাইয়ার সাথে দেখা করব। এর ঠিক দুইমাস আগে ভাইয়া বিয়ে করেছে। তাই নতুন ভাবিকে দেখার একপ্রকার অকুলতাও অনুভব করছিলাম। হঠাৎ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল। তবুও আমরা হাটতে থাকলাম। এক-সময় পায়ে ব্যথা ধরে যাওয়ায় আমরা বাসে করে মিরপুর ১০ নাম্বারে গিয়ে নামলাম। দিনটি ছিল শুক্রবার, ছুটির দিন। নামাযের সময় প্রায় পেরিয়ে গেছে। সুমন ভাইয়াকে ফোন করে বললাম, আমি এখন মিরপুর ১০ নাম্বার এ, তুমি কই ? আমিতো এখন নামাযে ভাইয়া। তুই একটা কাজ কর ওখানে দাঁড়া আমি আসছি। ১৫ মিনিট পরে সুমন ভাইয়া আসল । আমায় দেখা মাত্রই মুখে স্নিগ্ধ হাসি দিয়েই জড়িয়ে ধরল। বলল, কেমন আছিস রে ভাইয়া ? আমি বলি, ভালো। তারপর আমরা সবাই মিলে ভাইয়ার বাসায় গেলাম। নতুন বিবহিত ভাইয়ের বাসায় ছুটির দিনে দুপুরে হঠাৎ ৪ জন মেহমান এসে উপস্থিত হলে কেমন লাগে বলুন ??? নিশ্চই যার বাড়িতে যাওয়া হয় তার মনের কোথাও না কোথাও একটু বিরক্তির সৃষ্টি হয়। অথচ আমরা বাড়িতে যাওয়ার পর ভাবী অনেক ভালো ভাবেই আমাদের গ্রহণ করলেন। আমরা সোফায় বসে সুমন ভাইয়ার সাথে হরেক রকম গল্প করছি। আর রান্নাঘরে বেচারি নতুন ভাবী এই ৪ জন অঘোষিত মেহমানের জন্য রান্না করছেন। আমরা সবাই মিলে ভাইয়ার বিয়ের ছবি গুলো দেখলাম আর ভাইয়ার  সাথে মজা করলাম। ইতোমধ্যেই খিদায় পেট চো চো করছে। রান্না শেষে আমরা সবাই খেতে বসলাম আর ভাবি সুযোগ্য গৃহিনীর মত অতি যত্নে পরিবেশন করলেন। আমি ভেবে অবাক এত কম সময়ের মধ্যে তিনি কিভাবে ৬ রকমের তরকারী রান্না করে ফেললেন ! কিন্তু তখন এত কিছু ভাবার সময় কই ! সবাই খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। আধাঘন্টা ধরে আমরা খাইলাম। পেটের মাঝে এক আঙ্গুল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা ছিল না। তৃপ্তি করে খাওয়ানোর পর ভাবি খেতে বসলেন।কনক, প্রতিমকে তিনি বিয়ের পরেই দেখেছেন কিন্তু আমাকে দেখে নি। তাই খাওয়ার টেবিলে বসে তিনি আমার সাথে গল্প করছিলেন। আর আমি মালয়শিয়াতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিচিত্র সব অভিঙ্গতার কথা বলছি। তিন শুনছেন আর হাসছেন। যতদূর জানি, ভাবী একটি ভালো স্কুলে পড়ান। তিনি এমন ভাবে শুনছিলেন যেন তার কোন প্রিয়-বাধ্যগত ছাত্র তিনাকে কোন মজার গল্প বলছে আর তন্ময় হয়ে শুনছিলেন। অনেক গল্প করার পর অবশেষে বিকেল ৫ টার দিকে আমরা বিদাই নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। সেদিন বেশ ভালো লেগেছিল। আমি জীবনে অনেক মানুষের রান্না খেয়েছি। তবে হাতে গোণা মাত্র কিছু মানুষের রান্না আমি আজও  ভুলি নি। তাদের মাঝে আমাদের শ্রদ্ধেয় ও গুণী ভাবীও পড়েন। আমি ঠিক করেছি যখনই দেশে যাব, তখনই একদিন অন্তত সময় করে ভাইয়ার বাসায় খাব। আমি জানি আমায় বলতে হবে না, দেশে গেলে সুমন ভাইয়াই কান গরম করে দিবে একটি কথা বলে, তুই কবে আমার বাসায় আসবি …………

সুমন ভাইয়ার সাথে আমার পরিচয় বেশি দিনের নয় তবুও অল্প দিনেই সে আমায় তার অনেক কাছে টেনে নিয়েছে। অতি সহজেই মানুষকে আপন করে নেওয়ার গুণটা আমার এই ভাইটির আছে আমি জানি। আমাদের এই পথচলায় জীবনের বিভিন্ন বাঁকে বিভিন্ন ধরনের যাত্রি জোটে কিন্তু তাদের মাঝে কত জনের কথা আমাদের মনে থাকে বলুন ??? মনে থাকে শুধুমাত্র কিছু মানুষের কথা। আমি দেশের বাইরে আসার পর আমার পরিবারের বাইরে মাত্র ২/৩ জন মানুষ আমার নিয়মিত খবর নিয়েছে আর তাদের মাঝে সুমন ভাইয়া অন্যতম। আমি আমার কাছের মানুষগুলোর কাছে বেশি কিছু কিন্তু চাই না। শুধু মাত্র আমার একটু খবর নিবে তাতেই আমি মহা-খুশি। 

মানুষকে ভালো লাগতে কি বেশি কিছু লাগে ? না লাগে না। একটি মানুষকে ভালো লাগার জন্য মুখের একটি কথা,একটি হাসি, একটা মুহুর্তই যথেষ্ট। আর সাথে একটা ফুটফুটে মন দরকার। এগুলোর প্রতিটি সুমন ভাইায়ার আছে। যেদিনই ফোন দেয় এত চমৎকার করে বড় ভাইয়ের দাবি নিয়ে আমার সাথে কথা বলে যে কি বলব ! তার ঐসব কথা গুলো আমার বেশ প্রিয়। তাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য রইল অজস্র শুভকামনা আর দোয়া। ইসলাম ধর্মে পূর্ণজন্ম বলে কিছু নেই। যদি থাকত তবে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম, আমার দ্বিতীয় জন্মে যেন তিনি আমায় শৈশবেই সুমন ভাইয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এমন একটি মানুষ তিনি,যার সাথে কাটানো প্রতিটি সময় আপনার ভালো লাগতে বাধ্য। যখনই আমার সাথে দেখা হোক বা কথা হোক, অসীম দাবি নিয়ে কথা বলতে যে তিনি কিভাবে পারেন আমি ভেবে অবাক হই এখনো ! তার এই ব্যাপারটা আমার বড় প্রিয়। আমার একজন প্রিয় কাছের মানুষ সে; আশা করি আগামীতেও থাকবে আর আমাকে ভালোবেসে যাবে এভাবেই…………
 
এই সকল প্রিয় মানুষের ভালবাসার দাম আমি কোন দিন দিতে পারব না, কোন দিন না। তাই আমি ক্ষমাপ্রার্থী।কোন এক গল্পের বইতে পড়েছিলাম, মানুষ একবার ভালোবাসা পেলে তা বারবার পেতে চায়। দ্বিধাহীন ভাবে বলছি, আমিও পেতে চাই। এই সকল কাছের মানুষদের ভালোবাসার প্রতীক্ষায় কাটে আমার প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহুর্ত………            

Saturday, October 16, 2010

আপনি-ই কি সেই সাত-সাগরের মাঝি ????????


আপনি কি জানেন,আব্দুল হাকিম কে ??? তিনি আমাদের দেশের একজন সনামধন্য ব্যবসায়ীক ব্যক্তিত্ব এব‌ং দেশের প্রথম দশজন ধনী ব্যক্তিদের মাঝে অন্যতম। কিছুদিন আগে তিনি দেশের একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে ৭০ লক্ষ টাক ঋণ নিয়েছেন। শুধু তিনি কেন, দেশের অন্যান্য ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও বান্ডিল বান্ডিল টাকা থাকার পরও ঋণ নেয়। তারা বাড়ি কিনতে, গাড়ি কিন্তে, ব্যবসা শুরু করতেও ঋণ নেয়। কেন জানেন ??? কারণ একটাই, কর ফাঁকি দেওয়া। সবাই এটা জানে-ব্যাংক জানে, ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জানে, সরকার জানে এমনকি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানও জানে। কিন্তু কিছু বলে না শুধুই কর প্রদানে অনুপ্রাণিত করা আর বছর শেষে কিছু নিয়মিত কর দেওয়া মানুষকে ছাড়া। যদিও এটা প্রকাশ্যে চুরি করার মত একটা ব্যাপার, কিন্তু তবুও সবাই এটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সবকিছুই চলছে লোনের উপর।ক্ষমতাধর ধনী দেশগুলো গরিব ও  উন্নয়নশীল দেশ গুলোকে ঋণ দেয়। আর সাথে শর্ত জুড়ে দেয়- ঐ টাকা দিয়ে আমাদের কিছু জিনিস কিনে দাও এবং বাকী যা থাকে তা দেশে নিয়ে গিয়ে ভাগাভাগি করে নাও। তারপর, বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে আবার ঋণ দেয়, এবার ঋণ দিয়ে বলে, জিনিস পত্র কেনো, পরামর্শ ফি দাও…………।সবশেষে যখন এ গরিব দেশটা অনেক ঋণগ্রস্থ কয়ে যায় তখন সেই ধনী দেশগুলো আবার বলে, এবার আমার কথা শোনো, আমি যেভাবে বলছি সেভাবে দেশ চালাও…………. শ্রদ্ধেয় পাঠক, একবার ভাবুন তো আমাদের বাংলাদেশের অবস্থা কি এর চেয়ে ব্যতিক্রম ????????

গোটা বিশ্ব আজ  মালয়শিয়াকে একনামে চেনে। তৃতীয় বিশ্বের মহাদেশ হিসেবে খ্যাত এই দেশটিকে দেখলে আপনার মনেই হবে না এটা এশিয়া মহদেশের অন্তর্গত কোন দেশ। এখানে নেই যেমন মানুষে গিজগিজ করার মত দৃশ্য, নোংরা রাস্তাঘাট তেমনি নেই সীমাহিন দুর্নীতি, রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যাম। নেই রাহাজানি, ছিনতাই, টেন্ডাবাজি এবং ছাত্র রাজনীতির নামে চরিত্র নষ্ট করার মত বাস্তব প্রশিক্ষণ; দখল বাণিজ্য কিংবা অধিপত্য বিস্তারের নোংরা প্রচেষ্ঠা নেই। এখানে নেই রাজনীতিবিদদের বিরক্তিকর গালাগালি, ক্ষমতাবানদের সন্তানগুলোর ক্ষমতা প্রদর্শন, নেই দায়িত্ব পালন না করে প্রাইভেট ক্লিনিক এ ডাক্তারদের সময় কাটানো, নেই প্রকৌশলীদের ঘুষের টাকা ভাগ বন্টন করে নেওয়ার চরিত্র, তেমনি নেই নিরাপত্তা কর্মীদের জনগণকে নিরাপত্তাহীণ করে রাখার নোংরা কৌশল……….. এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে একজন আদর্শ নেতার জন্য। আর তিনি হলেন মাহাথীর মোহাম্মদ। মাত্র ২০ বছরে একটি অনুন্নত দেশকে কিভাবে বিশ্বের দরবারে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা যায় তার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি নিজেই।

যতদূর জানি, তিনি অন্যায়-অসংগতি পছন্দ করতেন না। তথাকথিত রাজনীতিবিদদের মত স্বজনপ্রীতির রাজনীতি করে যেতে পারতেন, ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সময় নিজের ঘনিষ্ট আত্মীয়কে ক্ষমতার চেয়ারে বসাতে পারতেন, যেমনটা করে এশিয়া তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদরা। পারতেন সুইস ব্যাংক এ টাকার পাহাড় গড়তে…………কিন্তু এসবের কোন কিছুই তিনি করেন নি। ক্ষমতায় থাকার জন্য মানুষ কত কি করে- মানুষ মানুষকে বিপদে ফেলে, মেরে ফেলে, সারাক্ষণ মিথ্যা বলে, বিদেশীদের লেজুরবৃত্তি করে………… তিনি তাও করেন নি। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পছন্দের মানুষকেও চাকরিচ্যুত করতেও দ্বিধা বোধ করেন নি………..এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কতজন নেতার আছে বলুন ??? অথচ মাহাথীর মোহাম্মদ যা করেন নি তাই করছে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা। ক্ষমতায় যাওয়ার পর পরই তাদের চেহারা পাল্টে যায়, সম্পদ পাল্টে যায়, আচরণ পাল্টে যায়। তারা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ব্যায় এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা নির্বাচনে ব্যয় করেন। দেশের সেবা করা, দেশের মানুষের সেবা করার পরিবর্তে তারা নির্বাচনকে পরিণত করেছে টাকা উপার্জনের একটি ব্যবসায়।মনে হয় আমাদের দেশটা যেন তাদের লিজ নেওয়া কোন সম্পত্তি।পাঁচ বছর পর পর ক্ষমতার হাত বদলের পরও যেমন খুশি সেভাবে দেশ পরিচালনা করতে থাকে তারা। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। একমাত্র দরিদ্র মানুষেরাই জানেন জীবনের অর্থ কত কঠিন, সন্তানকে মানুষ করা, লেখাপড়া শেখানো কত সাধনার, কত কষ্টের। দুর্নীতি আর টেন্ডারবাজি নিয়ে একদিন আমাদের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, উত্তরে আমাদের তিনি বলেছিলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা !!!!!!! সাবেক এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক সময় বলেছিলেন, মাটির দশ হাত নিচ থেকে হলেও নাকি সন্ত্রাসী খুঁজে বের করা হবে। অথচ সত্যি কথা কি জানেন ? সন্ত্রাসীরা এসব মন্ত্রী-এমপিদের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়, তাদের ছায়াতলে থাকে, তাদের পকেটে বসে নিঃচিন্তে ঘুমোয়।ইনারা হলেন আমাদের দেশের তথাকথিত, সম্মানিত রাজনীতিবিদ। 

বিশ্বের ক্ষমতাবানদেশের ক্ষমতাবানদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করার মত সাহস আর হৃদয় আমাদের দেশের লেজুরবৃত্তিকারী রাজনীতিবিদদের নেই। প্রতিবার নির্বাচনের সময় আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসব রাজনীতিবিদদের ভোট দেয় পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে, একটু ভালো থাকার উদ্দেশ্যে, দেশের উন্নতির স্বার্থে। কিন্তু আমরা কি পেয়েছি একজন সৎ, আদর্শবান মাহাথীর মোহাম্মদ এর মত কোন রাজনীতিবিদ ??? না, পাই নি। কিভাবে মোহের মাঝে নিজেকে নিলোর্ভী রাখা যায়, কিভাবে সৎ, মহৎ আর উদার মনের মানুষ হওয়া যায় এগুলো আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা জানেন না। তারা শুধু টাকা আর ক্ষমতার লোভের বসে নির্বাচন করেন। আমাদের এই সব রাজনীতিবিদ যারা আমাদের দেশকে একটা পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করেছে তাদের উচিত মাহাথীর মোহাম্মদ এর মত একজন আদর্শ নেতার গুণগুলো আত্তস্থ করা তারপর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। আজও  আমাদের দেশের মানুষ একজন সৎ, আদর্শবান নেতার সন্ধান করে চলেছে যে আমাদের দেশকে পৃথিবীর বুকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করবে, দেশের সম্পদের সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহার করে দেশের মানুষের সেবা করবে, মানুষকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখাবে না, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করবে। অনেক খুঁজেছি অনেক, কিন্তু পাই নি । পাই নি আজও  এরকম একজন নেতা………….। 

এরকম একজন নেতা আকাশ থেকে আসবে না। আমাদের মাঝে থেকে কাউকে হতে হবে।আমাদের মাঝে থেকেই কাউকে সাত-সাগরের মাঝি হয়ে আমাদের অতি প্রত্যাশিত তরীটিকে কাঙ্খিত তীরে ভিড়াতে হবে। একবার ভাবুন তো, আপনি কি সেই মানুষটি……??? আপনি কি সেই সাত সাগরের মাঝি ??? যদি হোন তবে আজকেউ জেগে উঠুন………
 
১৫ কোটি মানুষ আপনার অপেক্ষায়………… একবুক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে………….  

Monday, October 11, 2010

খোলা চিঠি……….

আমি আগের ঠিকানায় আছি। সময় পেলে এসো একবার. দুজনে কিছুক্ষণ বসি পাশাপাশি.. আমি আগের ঠিকানায় আছি ……………”
আমার কাছের মানুষেরা আমার ঠিকানায় আসবে না আমি জানি। কেউ এসে বলবে না, তুমি সত্যি ভাল আছ তো ? তবুও আমার আজঅব্দি আমার কাছের মানুষগুলোর প্রত্যাবর্তনের আশায় প্রহরগোণা………..

প্রিয় লীলা,
বুকের ভিতর কেমন যেন করছে আমার। কোন কোন রাতে এমন হয় আমার। কোন কিছুই করতে ভাল লাগে না; না গল্প করতে, আড্ডা দিতে, না গুমোতে, না গল্পের বই পড়তে। ফাঁকা ফাঁকা লাগে সবকিছু- মাথার ভিতর, বুকের ভিতর, আশেপাশের চারপাশ। তাই ভাবলাম একটা চিঠি লিখি। কিন্তু কাকে লিখা যায় ? ভাবতে ভাবতে প্রথম তোমার কথাই মাথায় আসলো। ভয় হয় চিঠির মূল্য না দিয়ে অবঙ্গা করে ? কারণ আমি শুধু আমার কাছের মানুষগুলোকেই চিঠি লিখি। খুব যত্ন করে লিখার চেষ্টা করি। একটা কথা কি জান, আমি আমার কাছের মানুষগুলোকে খুব ভালবাসি। আমার কাছের মানুষগুলো আমায় যতটা ভালবাসে, আমায় যতটা ঘৃণা করে তার চেয়েও বেশি। হাঁ তার চেয়ের বেশি…………..

তোমায় লিখা এটা আমার প্রথম আর হয়ত এটাই শেষ চিঠি।একটি ছেলে একটি মেয়েকে চিঠি লিখলেই যে সেটি প্রেমপত্র হবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। এটা তারাই বিশ্বাস করে যারা সংকীর্ণমনা, যাদের বন্ধনের প্রতি বিশ্বাস নড়বড়ে। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে আমরা চিঠি লিখা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। অথচ তুমি কি জান, চিঠির মাধ্যমে শব্দমালা দিয়ে তুমি অপর একটি মানুষের মন ছুয়ে দিতে পারবে………

বিশ্বাসটা অনেকেই করেন- যারা গুছিয়ে কথা বলতে পারে, তারাগুছিয়ে লিখতে পারে না আর যারা গুছিয়ে লিখতে পারে তারা গুছিয়ে বলতে পারে না।কিন্তু আমার বেলা দুটোর কোনটিই খাটে না কারন আমি দুটোর কোনটিই পারি না……….!!!!! যা বলতে চাই তা বোঝাতে পারলেই আমি স্বার্থক………

প্রিয় লীলা, ভালবাসার মানুষতো তাকেই বলে যে, আমার পিছনেও হাঁটবে না আমার সামনেও হাঁটবে না, বরং আমার হাত ধরে আমার পাশাপাশি হাঁটবে। যার অনুভূতি আর অস্তিত্বে থাকবে আমার প্রগাঢ় উপস্তিতি আর ছোঁয়া।যার হাত ধরে আমি আমার সীমাবদ্ধতা গুলোকে অতিক্রম করার সাহস করবো। অথচ কি অদ্ভুত দেখো ! আমার মত একটা মানুষকে দুদিন দেখেই, আমার সাথে কথা বলেই নাকি তোমার ভাল লেগে গেল !!!!!! তুমি অন্য একটি ছেলেকে ভালবাসতে, সেও তোমায় ভালবাসত এবং এখনো বাসে। আমার প্রতি হয়ত তোমার ভাল লাগার সূচনা হয়েছিল, কিন্তু ভালবাসার সৃষ্টি হয় নি। একটি মানুষের ছায়া কি অন্য একটি মানুষের মাঝে চাইলেই দেখতে পাওয়া যায় বল ? না, যায় না। কারন আমরা প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র, তেমনি স্বতন্ত্র আমাদের চিন্তাভাবনা, স্বপ্ন……… তোমার ভালবাসার মানুষটির সাথে তোমার সমস্যা গুলোর কথা গুলো শেয়ার কর, দেখবে সমাধান সেখানেই বেড়িয়ে আসবে। তুমি তার  সাথেই সুখে থাকবে……….

মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ কি বলতে পারো ? মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ হল সরলতা। এই সরলতা এমন একটি গুণ যার মাঝে থাকে না কোন ভণিতা, কোন স্বার্থ, কোন উদ্দেশ্য……… স্পৃহাহীণ আমি এক অদৃশ্য পরিচালকের আঙ্গাবহ দাস। নিজেই নিজের জন্য যে গোলক ধাঁধা তৈরি করেছি তা থেকে কি চাইলেই আমি বের হয়ে আসতে পারি ??? না, পারি না। বাইরে থেকে কি বোঝা যায় একটি মানুষের ভিতরে কি চলছে ? না, যায় না। আমার মাঝে যে একটি নয় হাজারো পলিপ আছে তা আমি জানি। আর এক একটি পলিপ তৈরি হয়েছে এক-একটি ভুলের জন্য, এক একটি ব্যর্থতার জন্য, কাছের মানুষগুলোর কাছে থেকে অবহেলা পাবার জন্য, কাছের কিছু বন্দুদের দ্বারা বারবার Betray এর সীকার হওয়ার জন্য……..। 

কবিতা পড়তে আমার  খুব ভাল লাগে। এটি আমার একটি অতি প্রিয় কবিতা। না, আমি লিখি নি। রেডিও আমার এ প্রতি শুক্রবার ছেঁড়াপাতা নামক একটি কবিতার অনুষ্টান হয়। এটা আমার খুব প্রিয় ছিল। যখন দেশে ছিলাম তখন প্রতি শুক্রবার নিয়ম করে শুনতাম। সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

কি দেব তোমায় বল ?
আমি যে মেঘ নই যে তোমায় বৃষ্টি দেব
আমি অসীম নীলিমাও নই যে তোমায় স্নিগ্ধতা দেবো
আমি এক ব্যথিত মানুষ, এমন হৃদয় ভরা ভালবাসি কই ?
আমার ঘরে ফুল ফোটাব, ককনো হাসির রাশি দেব উপহার
তার মত কিছুই তো নেই !!!!!
আমার হাতদুটি এত আলোকিত নয় যে,
অসুখী শরীরে ছোঁয়া দেব আর ছেরে যাবে তোমার সব অসুখ।
আমিতো শিশির নই যে তোমার রুক্ষপত্র সিক্ত করবো
আমি কোন কুলুকুলু নদী নই যে,
তোমার হৃদয়ের শস্যক্ষেত ভিজিয়ে দেবো।
এমনকি কোন অরণ্য উদ্বিদ নই যে,
তোমার দুঃখের পাশে ফুটেঁ থাকবো চাঁপা কি বকুল হয়ে।
আমি কোন শিউলি নই তোমার, ভোরের শুভ্র শয্যা বিছাব।
আমি কোন তৃণ নই যে, বুক পেতে দেব মাথা রেখে অবসাদে শোবে।
এমনকি ঝড়া পাতাও নই যে, বন হবো
ভালবেসে টিপটাপ সারারাত ঝড়বো তোমার সিথানে।
আমি শুধু দিতে পারি ………………… একগুচ্ছ কষ্ট  ।।
[ সংগৃহীত ]

জীবনে আমি অনেক ভুল করেছি। মাঝে মাঝে মনে হয় ভুল কোন জীনিসই জীবনে রাখতে নেই। আমরা প্রতিটি স্বতন্ত্র মানুষের কাছে জীবনের অর্থও ভিন্ন ভিন্ন। চারদিকে অসংখ্য ভুলের ছড়াছড়ি। বুকভরা ভালবাসা নিয়ে চলতে চলতে আমার কেবলই মনে হঢ আমার চিন্তার পূর্ণজন্ম হয়েছে। প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা, প্রবঞ্চিতকে দেয় দাহ আর অনুতপ্তকে কি দেয় ? প্রেম, অনুতপ্তকে দেয় হাহাকার। তীব্র হাহাকার, পাঁজর ভাঙার মত হাহাকার……………….

আমাদের এখানে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে অথবা রাতে বৃষ্টি হয়। আজ  চমৎকার জ্যোৎনা উঠেছে। আকাশের ঠিক মাঝখানে যেমন মায়াবতী নারীরা কপালের ঠিক মাঝখানে টিপ পড়ে, তেমনি পুটে আছে চাঁদ মামা। আর সূর্যথেকে আলো নিয়ে তাকে জ্যোৎস্নায় রূপান্তরিত করে আমারদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। চারদিক জ্যোৎনার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে।আমার মত ঘূণেধরা,আট পৌরে মানুষগুলো যারা হাজারো পলিপ নিয়ে চলে, তারাও আজ  জ্যোৎনার রূপালী আলোয় নিজের ছায়া দেখতে পায় যেমন করে আমি পাচ্ছি। সব মানুষ, দালানকোঠা, জীবজন্তু, পশুপাখি ইচ্ছেমত জ্যোৎস্না গায়ে মেখে আনন্দে অবগাহন করছে। আমার মত ঘূণেধরা মানুষগুলো আকাশের দিকে তাকিয়ে জ্যোৎস্না গায়ে মাখতে মাখতে ভবিষ্যতের স্বপ্নে আচ্ছন্ন হয়। নিজের গোলাপ পূর্ণ হৃদয় সম্পূর্ণ সমর্পণ করতে চায় ভালবাসার মানুষঠটকে আর ভালবাসার মানুষটিকে আলিঙ্গন করে অন্তহীণ সুখ অনুভব করতে চায়। আমার কাছে যদিও সুখটির চেয়ে স্বপ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। কারন সুখের স্বপ্ন, সুখের চেয়ে প্রলম্বিত। সুখ মুহুর্তের আর স্বপ্ন ……………???
স্বপ্নতো চিরদিনের……………………..