আপনি কি জানেন,আব্দুল হাকিম কে ??? তিনি আমাদের দেশের একজন সনামধন্য ব্যবসায়ীক ব্যক্তিত্ব এবং দেশের প্রথম দশজন ধনী ব্যক্তিদের মাঝে অন্যতম। কিছুদিন আগে তিনি দেশের একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে ৭০ লক্ষ টাক ঋণ নিয়েছেন। শুধু তিনি কেন, দেশের অন্যান্য ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও বান্ডিল বান্ডিল টাকা থাকার পরও ঋণ নেয়। তারা বাড়ি কিনতে, গাড়ি কিন্তে, ব্যবসা শুরু করতেও ঋণ নেয়। কেন জানেন ??? কারণ একটাই, কর ফাঁকি দেওয়া। সবাই এটা জানে-ব্যাংক জানে, ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জানে, সরকার জানে এমনকি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানও জানে। কিন্তু কিছু বলে না শুধুই কর প্রদানে অনুপ্রাণিত করা আর বছর শেষে কিছু নিয়মিত কর দেওয়া মানুষকে ছাড়া। যদিও এটা প্রকাশ্যে চুরি করার মত একটা ব্যাপার, কিন্তু তবুও সবাই এটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সবকিছুই চলছে লোনের উপর।ক্ষমতাধর ধনী দেশগুলো গরিব ও উন্নয়নশীল দেশ গুলোকে ঋণ দেয়। আর সাথে শর্ত জুড়ে দেয়- ঐ টাকা দিয়ে আমাদের কিছু জিনিস কিনে দাও এবং বাকী যা থাকে তা দেশে নিয়ে গিয়ে ভাগাভাগি করে নাও। তারপর, বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে আবার ঋণ দেয়, এবার ঋণ দিয়ে বলে, জিনিস পত্র কেনো, পরামর্শ ফি দাও…………।সবশেষে যখন এ গরিব দেশটা অনেক ঋণগ্রস্থ কয়ে যায় তখন সেই ধনী দেশগুলো আবার বলে, এবার আমার কথা শোনো, আমি যেভাবে বলছি সেভাবে দেশ চালাও…………. শ্রদ্ধেয় পাঠক, একবার ভাবুন তো আমাদের বাংলাদেশের অবস্থা কি এর চেয়ে ব্যতিক্রম ????????
গোটা বিশ্ব আজ মালয়শিয়াকে একনামে চেনে। তৃতীয় বিশ্বের মহাদেশ হিসেবে খ্যাত এই দেশটিকে দেখলে আপনার মনেই হবে না এটা এশিয়া মহদেশের অন্তর্গত কোন দেশ। এখানে নেই যেমন মানুষে গিজগিজ করার মত দৃশ্য, নোংরা রাস্তাঘাট তেমনি নেই সীমাহিন দুর্নীতি, রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যাম। নেই রাহাজানি, ছিনতাই, টেন্ডাবাজি এবং ছাত্র রাজনীতির নামে চরিত্র নষ্ট করার মত বাস্তব প্রশিক্ষণ; দখল বাণিজ্য কিংবা অধিপত্য বিস্তারের নোংরা প্রচেষ্ঠা নেই। এখানে নেই রাজনীতিবিদদের বিরক্তিকর গালাগালি, ক্ষমতাবানদের সন্তানগুলোর ক্ষমতা প্রদর্শন, নেই দায়িত্ব পালন না করে প্রাইভেট ক্লিনিক এ ডাক্তারদের সময় কাটানো, নেই প্রকৌশলীদের ঘুষের টাকা ভাগ বন্টন করে নেওয়ার চরিত্র, তেমনি নেই নিরাপত্তা কর্মীদের জনগণকে নিরাপত্তাহীণ করে রাখার নোংরা কৌশল……….. এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে একজন আদর্শ নেতার জন্য। আর তিনি হলেন মাহাথীর মোহাম্মদ। মাত্র ২০ বছরে একটি অনুন্নত দেশকে কিভাবে বিশ্বের দরবারে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা যায় তার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি নিজেই।
যতদূর জানি, তিনি অন্যায়-অসংগতি পছন্দ করতেন না। তথাকথিত রাজনীতিবিদদের মত স্বজনপ্রীতির রাজনীতি করে যেতে পারতেন, ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সময় নিজের ঘনিষ্ট আত্মীয়কে ক্ষমতার চেয়ারে বসাতে পারতেন, যেমনটা করে এশিয়া তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদরা। পারতেন সুইস ব্যাংক এ টাকার পাহাড় গড়তে…………কিন্তু এসবের কোন কিছুই তিনি করেন নি। ক্ষমতায় থাকার জন্য মানুষ কত কি করে- মানুষ মানুষকে বিপদে ফেলে, মেরে ফেলে, সারাক্ষণ মিথ্যা বলে, বিদেশীদের লেজুরবৃত্তি করে………… তিনি তাও করেন নি। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পছন্দের মানুষকেও চাকরিচ্যুত করতেও দ্বিধা বোধ করেন নি………..এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কতজন নেতার আছে বলুন ??? অথচ মাহাথীর মোহাম্মদ যা করেন নি তাই করছে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা। ক্ষমতায় যাওয়ার পর পরই তাদের চেহারা পাল্টে যায়, সম্পদ পাল্টে যায়, আচরণ পাল্টে যায়। তারা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ব্যায় এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা নির্বাচনে ব্যয় করেন। দেশের সেবা করা, দেশের মানুষের সেবা করার পরিবর্তে তারা নির্বাচনকে পরিণত করেছে টাকা উপার্জনের একটি ব্যবসায়।মনে হয় আমাদের দেশটা যেন তাদের লিজ নেওয়া কোন সম্পত্তি।পাঁচ বছর পর পর ক্ষমতার হাত বদলের পরও যেমন খুশি সেভাবে দেশ পরিচালনা করতে থাকে তারা। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। একমাত্র দরিদ্র মানুষেরাই জানেন জীবনের অর্থ কত কঠিন, সন্তানকে মানুষ করা, লেখাপড়া শেখানো কত সাধনার, কত কষ্টের। দুর্নীতি আর টেন্ডারবাজি নিয়ে একদিন আমাদের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, উত্তরে আমাদের তিনি বলেছিলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা !!!!!!! সাবেক এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক সময় বলেছিলেন, “মাটির দশ হাত নিচ থেকে হলেও নাকি সন্ত্রাসী খুঁজে বের করা হবে”। অথচ সত্যি কথা কি জানেন ? সন্ত্রাসীরা এসব মন্ত্রী-এমপিদের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়, তাদের ছায়াতলে থাকে, তাদের পকেটে বসে নিঃচিন্তে ঘুমোয়।ইনারা হলেন আমাদের দেশের তথাকথিত, সম্মানিত রাজনীতিবিদ।
বিশ্বের ক্ষমতাবানদেশের ক্ষমতাবানদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করার মত সাহস আর হৃদয় আমাদের দেশের লেজুরবৃত্তিকারী রাজনীতিবিদদের নেই। প্রতিবার নির্বাচনের সময় আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসব রাজনীতিবিদদের ভোট দেয় পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে, একটু ভালো থাকার উদ্দেশ্যে, দেশের উন্নতির স্বার্থে। কিন্তু আমরা কি পেয়েছি একজন সৎ, আদর্শবান মাহাথীর মোহাম্মদ এর মত কোন রাজনীতিবিদ ??? না, পাই নি। কিভাবে মোহের মাঝে নিজেকে নিলোর্ভী রাখা যায়, কিভাবে সৎ, মহৎ আর উদার মনের মানুষ হওয়া যায় এগুলো আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা জানেন না। তারা শুধু টাকা আর ক্ষমতার লোভের বসে নির্বাচন করেন। আমাদের এই সব রাজনীতিবিদ যারা আমাদের দেশকে একটা পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করেছে তাদের উচিত মাহাথীর মোহাম্মদ এর মত একজন আদর্শ নেতার গুণগুলো আত্তস্থ করা তারপর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। আজও আমাদের দেশের মানুষ একজন সৎ, আদর্শবান নেতার সন্ধান করে চলেছে যে আমাদের দেশকে পৃথিবীর বুকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করবে, দেশের সম্পদের সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহার করে দেশের মানুষের সেবা করবে, মানুষকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখাবে না, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করবে। অনেক খুঁজেছি অনেক, কিন্তু পাই নি । পাই নি আজও এরকম একজন নেতা………….।
এরকম একজন নেতা আকাশ থেকে আসবে না। আমাদের মাঝে থেকে কাউকে হতে হবে।আমাদের মাঝে থেকেই কাউকে সাত-সাগরের মাঝি হয়ে আমাদের অতি প্রত্যাশিত তরীটিকে কাঙ্খিত তীরে ভিড়াতে হবে। একবার ভাবুন তো, আপনি কি সেই মানুষটি……??? আপনি কি সেই সাত সাগরের মাঝি ??? যদি হোন তবে আজকেউ জেগে উঠুন………
১৫ কোটি মানুষ আপনার অপেক্ষায়………… একবুক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে………….