Saturday, October 22, 2011

শেষ কথা…

উৎসর্গ…
যেখানে দাবি আছে, প্রত্যাশা আছে, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি আছে, সাথে কলহ এবং পূর্ণমিলনও আছে” সেই বন্ধনটিই হলো ‘বন্ধুত্ব’। আমি এভাবে বন্ধুত্বের সঙ্গা বলতে ভালবাসি। তবে এই সঙ্গা টিকে প্রমাণ করেছে আমার এই বিশ্বস্ত বন্ধুটি। আমায় নিয়ে আগ্রহের সীমা নেই মানুষটির! আমার অতি প্রিয় কাছের মানুষ। সাধারণ হয়েও আমার কাছে একটু অসাধারণ একজন !
প্রিয় বেণী-মাধব, প্রিয় মৃদুল চৌধুরী কনক
বলতে পারিস, এক জীবনে কত পূণ্য করলে তোর মত একজন অসাধারণ, অকৃত্রিম বন্ধু পাওয়া যায় ????




আম্মু, সিফাত ভাইয়া কই ? বলতে পার ?
না মা, আমিতো জানি না। হয়ত ড্রইং রুমে বসে পেপার পড়ছে….

সনি ড্রইং রুমে গিয়ে দেখে, সিফাত বসে বসে আনমনে কি যেন ভাবছে।
সনি খুব সাবধানে ধীর পায়ে সিফাতের সামনের সোফায় গিয়ে বসে। অথচ সিফাত নিজের জগতেই মগ্ন আছে।

খানিকক্ষণ পর আলতো কন্ঠে সনি ডাকে, সিফাত ভাইয়া ???

আড়মোরা ভেঙ্গে সিফাত বলে, কি….কি……।সনির দিকে তাকিয়ে বলে, কখন এসেছিস ?
বেশ কিছুক্ষণ হলো এখানে এসেছি। দেখলাম, আপনি খুব মনযোগ দিয়ে কি যেন ভাবছেন ? তাই চুপচাপ বসে আছি।

কি ভাবছেন শুনি ??? বেশ মজার ভঙ্গিতে সনি জিঞ্জেস করে, কার কথা ভাবছেন বলেন তো ????
কথাটা বলে আর হাসতে থাকে সনি।

মলিন হেসে সিফাত বলে, কারো কথা না রে ভাইয়া।

মুচকি হেসে সনি বলে, আমি ছেলেটা একটু বোকা এটা আপনি জানেন। তবে এটুকু কিন্তু বুঝি যে, মানুষ যখন নিজেকে লুকাতে চায় তখন সে মিথ্যে বলে। যেমনটা আপনি বলছেন।

এমন সময় সিফাত এর মোবাইল বেজে ওঠে…… সজীব ফোন করেছে।
হ্যালো, সিফাত ভাই ? বাসায় আছেন ???
হ্যাঁ বাসায় আছি। চলে আয়…….
সজীব বলে, থাকেন, আমি আসছি…….

১৫ মিনিট পর সজীব এসে বসার ঘরে সিফাত এর পাশে বসে। সিফাত এর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে জিঞ্জেস করে,
কি ভাই, মন খারাপ???

জানিসতো কি কারনে মন খারাপ। Something missing in my heart…

হঠাৎ সিফাত গান ধরে, “ কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে তোমারে দেখিতে দেয় না, মন মেঘে তোমারে অন্ধ করে রাখে,
তোমারে দেখিতে দেয় না…….মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না….”।
গান শেষ হলেই সজীব বলে, ওনার নাম্বরতো আছেই- ফোন দেন কথা বলেন। দেখিয়েন, ভাল লাগবে।

আচ্ছা, সজীব এমনটা কেন কেন হলো বলতে পারিস ???

তুইতো জানিস, আমি তার সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করেছি। আর সে যদি আমায় ভালইবাসত তাহলে রাস্তায় আমায় এতগুলো মানুষের সামনে কেন অপমান করলো ? আমার মা-বাবার নামে বাজে বাজে কথা বলতো ? এমনকি আমি যখন মাস্টার্স করতে বাইরে যাব তখন সে তার মামাকে দিয়ে ফোন করিয়ে আমার ভিসা পর্যন্ত আটকে রেখেছিল ?
কেন, কেন এমন করেছে ???

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সজীব। খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলে, আপনি একটু জেদী ছিলেন। আর তমা আপুও ছিল বেশ রাগী। আর রেগে গেলে মানুষ পশুর মত আচরণ করে। আর তমা আপুও রেগে গিয়ে বিভিন্ন উল্টোপাল্টা কাজ করেছে। তবে একটা কথাই বলব, তমা আপু আপনাকে সত্যিই অনেক ভালবাসে।

আমি এবার দেশে আসার পর একদম ভালো নেইরে সজীব। যে মানুষটির কথা কখনো ভাববো না বলে পণ করেছিলাম, তার কথাই বারবার মনে পড়েছে। আমি…… আমি বুঝি পাগল হয়ে যাব রে …… পাগল হয়ে যাব।

সজীব আলতো করে তার হাতটা সিফাতের ঘাড়ে রেখে বলে, একটা কথা মনে রাখবেন- মানুষ তার প্রথম ভালবাসাকে কখনোই ভুলতে পারে না। আর আপনি যখন প্রিয় মানুষদের থেকে দূরে থাকবেন তখনই আপনি তাদের প্রতি আপনার এই ভালবাসার গাঢ়ত্বটা ক্রমশ বাড়বেই।

হঠাৎ সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে সজীব হাঁটতে শুরু করে।

আপনি যতই অস্বীকার করেন না কেন আপনি কিন্তু তমা আপুকে এখনও ভালবাসেন। এটা যত তাড়াতাড়ি মেনে নেন ততই মঙ্গল।
কিন্তু, তমা কি এখন আর আমার কাছে ফিরে আসবে ???
আরে, আসবে না মানে ? আলবত আসবে। হয়ত প্রথমে একটু রাগ ঝাড়বে, এত দিনের জমানো ক্ষোভ তো ….. তারপর দেখবেন, সব ঠিক হয়ে গেছে। ……

১ বছর আগে সিফাত এর সাথে তমা’র বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়। তবুও এউ এক বছরের জীবনে সিফাত মাঝে মাঝেই তমার কথা ভেবেছে। সিফাতের চিন্তা-চেতনা, ভাললাগা এসবের সাথে তমার মিল ছিল না বললেই চলে। তাই সারাক্ষণ তাদের মাঝে ঝগড়া লেগেই থাকত। অবশেষে সিফাত স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডনে মাস্টার্স করতে চলে গেল। বিদেশে যাওয়ার পরেও সিফাতের জীবনে কোন পরিবর্তন ঘটে নি, কিন্তু অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটে গেছে তমার জীবনে। সিফাত চলে যাওয়ার পর তমার সাথে হাবীব নামের একটা ছেলের পরিচয় ঘটে। তারপর ভাললাগা। আর পরিচয়ের ২ মাসের মধ্যেই হাবীব কিছুটা জোর করে তমার সাথে এংগেষ্টমেন্ট করে ফেলে গোপনে। তারপর আসতে আসতে তমাকে তার বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বিষয়টা একটু লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হলেও পরে তমার মা, খারারাও জানতে পারে। তমার প্রবল ইচ্ছার কারনেই তার মা-খালারা বিষয়টা মেনে নিয়েছিল।

একসময় বিষয়টা সিফাতও জানতে পারে। সেদিন বেশ কষ্ট পেয়েছিল সে। বুঝেছিল, কাছের মানুষদের হারিয়ে ফেলার কষ্ট কাকে বলে ! একজন মানুষ যে তার জন্যে পাগল ছিল, তাকে পাগলের মত ভালবাসত সে কি না আজ অন্য একটি মানুষের হয়ে গেল। যাকে চাইলেই আর দেখতে পাওয়া যাবে না, চাইলেই আলতো করে তার হাত ছুঁয়ে দেয়া হবে না !!! সারাটা রাত সিফাত বুকের ব্যথায় ঘুমোতে পারে নি। যেন নিজের শরীর থেকে কেউ তাজা এক টুকরো গোশত কেটে নিয়ে গিয়ে সেই ক্ষত স্থানে লবণ লাগিয়ে গেছে। ….

অনেক ভাবছে কিভাবে সিফাত তমার সাথে যোগাযোগ করবে ? যোগাযোগ করার কথা মাথায় আসলেই একরাজ সঙ্কা আর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তার সামনে এসে ভর করে।

অবশেষে সিফাত সাহস করে তমাকে একটা এসএমএস করে,

“ সালাম। কেমন আছেন আপনি ? আপনার বাসার সবাই ? হাবীব ভাই ? আমি মাত্র কয়েকদিন হল দেশে ফিরেছি …..”।
এসএমএসটা পাঠানোর ৩০ মিনিট পরে তমা সিফাতকে কল দেয়। ফোন ধরেই সিফাত বলে, কেমন আছেন আপনি ???
কানিক্ষণ চুপ করে থাকার পর তমা বলে, হ্যাঁ ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন ???

ফিকে হাসি হেসে সিফাত বলে, “জীবন যখন যেমন……তারই মাঝে অবগাহন”। তবে ……..ভাল আছি।
আপনার বাসার সবাই, হাবীব ভাই কেমন আছে ? সিফাত জিঞ্জেস করে।
হ্যাঁ সবাই ভালো আছে। রাব্বী বেশ বড় হয়ে গেছে, ক্লাস এইট এ পড়ছে।

এরপর কিছুক্ষণ দুজনই চুপ করে থাকে, মখে কোন কথা নেই।

দুজন দুজনের একটু কাছাকাছি আসতে চাইলেও বাস্তবতা যেখানে প্রতিকূলে সেখানে কি মনের আবেগ প্রকাশ করা সমীচিন ??? না, কখনোই না। বড়ং তাকে লুকিয়ে রাখাই ভাল।

ধীর কন্ঠে তমা এবার বলে, আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, রাগের মাথায় অনেক খারাপ কথা বলেছি। আমায় ক্ষমা করবেন।

সাথে সাথেই সিফাত বলে, না না আপনি ক্ষমা চাচ্ছেন কেন !!! আপনারতো কোন দোষ নেই। সব দোষ আমার। তাই আমিই আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। এখন আর আপনাকে নিয়ে আমার মনে কোন ক্ষোভ, কোন প্রশ্নবোধক চিহ্ন নেই। বরং আমি আপনাকে বেশ শ্রদ্ধা করি।

সিফাতের কথা গুলো শুনে তমা বেশ অবাক হয়। সিফাত আজ হঠাৎ এরকম কথা বলছে কেন ???
কোন এক গল্পের বইতে পড়েছিলাম, প্রিয় মানুষ দূরে চলে গেলে বা তার সাথে বিচ্ছেদ ঘটলে তার নামে সবসময় ভাল ভাল কথা বলতে হয়। আর আমিও তাই করছি।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তমা বলে, গতবার আপনি লন্ডনে যাওয়ার সময় আমার সাথে একটি বারের জন্যে হলেও দেখা করেন নি। আমি এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এসেছিলাম। তারপরও আপনি দেখা করেন নি। দেখা করলে হয়ত আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না। আপনি যা করেছেন আমার সাথে, তা আমি কখনোই ভুলবো না। কখনো না।

নরম সুরে সিফাত বলে, আমিতো আগেই বলেছি- সব দোষ আমার। আমার জন্যেই এতকিছু। আমি বরাবারই নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়েছি। এবারও তাই নিলাম।

আর এভাবে কথা বলতে বলতে কথন যে, ৪০ মিনিট পার হয়ে যায় সিফাত বা তমা কেউই টের পায় নি। অবশেষে সিফাত বলে, আজ অনেক কথা হলো। রাখি……. ভাল থাকবেন।
তমা বলে, আপনিও ভাল থাকবেন।

ফোনটা রাখার পর থেকেই সিফাতের বেশ ভালো লাগতে শুরু করে। বাসায় ইলেকট্রিসিটি নেই, বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে তবুও পরিবেশটাকে তার অসহ্য মনে হচ্ছে না। অনাবিল আনন্দে মুখরিত সিফাতের চেতনার প্রতিটি মুহূর্ত।
বাড়ির উঠোনে সিফাত চেয়ার নিয়ে গিয়ে বসে আর মোবাইলে গান ছেড়ে দেয়….
“তুমি বরুণা হলে হবো আমি সুনীল…..”

গান শুনতে শুনতে একসময় সিফাত নিজের মুখেই গাইতে শুরু করে….
“ তুমি পাহাড় হলে হবো আমি সবুজ
তুমি শাসন করলে হবো আমি অবুঝ
তুমি অরণ্য হও, হবো পাখি
তুমি অশ্রু হলে হয়ে যাব আঁখি……”

এরপর থেকেই ১ দিন পরপর সিফাত আর তমার ছোট ছোট কথা বলা শুরু হয়।
একদিন সিফাত আর সজীব, নাহিদদের বাসা থেকে ফিরছিল। হঠাৎ সিফাত এর মোবাইলে তমা ফোন দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“আমি আজ দুপুরে হাবীবকে বলে দিয়েছি আমি আর তার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবো না। আমি কোনভাবেই আর পারছি না। এখন আমার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। কেন যে সেদিন এংগেষ্টমেন্টটা করতে গেলাম !!! আপনি চাইলে আমার সাথে সম্পর্ক আবার কন্টিনিউ করতে পারেন আর না চাইলে আমি একাই থাকবো ……”।

কথাগুলো শুনার পর খানিকক্ষণ সিফাত অসম্ভব আনন্দে ভাসতে থাকে। সাথে সাথেই সজীব আর নাহিদকে এসএমএস করে, “ তমা ফিরে আসছে….. আমি খুব খুশি। খু-উ-উ-ব-ই খুশি ……”।

আর সিফাতের খুশিতে সজীব আর নাহিদও নিজেদের বিলিয়ে দেয়। এরা তিনজন যদিও তিনটি স্বতন্ত্র মানুষ, তবুও বন্ধনের দিক দিয়ে এরা এক আত্মা।

রাতের দিকে সিফাত বেশ আনন্দ নিয়ে তার বড় ভাইকে ফোন দেয়।
কেমন আছো ভাইয়া ??? ভাবি কেমন আছে ???
ভাল আছি। । আর তোর ভাবিও ভাল আছে।

ভাইয়া তুমি কি জান, তুমি খুব ভাগ্যবান একজন মানুষ। সবাই ভালবাসার মানুষকে নিজের মত করে পায় না কিন্তু তুমি পেয়েছ।
আবার এমনও মানুষ আছে যারা সারা জীবনই ভালবাসার মানুষের খবর পায় না, আবার অনেকে পেয়েও হারিয়ে ফেলে…..।
এ সবকিছু বুঝি আমাদের সমাজের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য। আচ্ছা ভাইয়া, ভালবাসার মানুষ দূরে চলে গিয়ে আবার ফিরে আসলে কি করা উছিত ??? তাকে কি আপন করে নেওয়া উচিত নাকি বুঝিয়ে দেওয়া উচিত প্রত্যাখান এর ব্যথা কতটা তীব্র ???

দেখ সিফাত, তুই আমায় কি বলতে চাচ্ছিস তা আমি বুঝেছি। তুই চাইলে তমার সাথে আবার সম্পর্কে জড়াতে পারিস তবে….। তবে এটুকু নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, সে আর কোন ঝামেলা করবে না, মা-বাবাকে নিয়ে উল্টোপাল্টা মন্তব্য করবে না। আমরা তোমাকে নিয়ে অন্তত এ বিষয়ে আর টেনশনে থাকতে চাই না।

রাখি এবার। এখন তুই ডিসিশান নে কি করবি ???? ভাল থাকিস।
ফোনটা রাখার পর সিফাতের বেশ মন খারাপ হয়ে যায়। খানিকক্ষণ পর তমা তাকে ফোন করে।
জিঞ্জেস করে, “ কি ডিসিশান নিলেন” ???

ধীর কন্ঠে সিফাত বলে, আপনি আমার কাছে ফিরে আসা মানেই আপনাকে এংগেষ্টমেন্ট ভেঙ্গে ফেলতে হবে। আর এটা করলে আপনার পরিবার, হাবীব ভাইয়ের পরিবার সবাই কষ্ট পাবে। সাথে আপনাকেও শুনতে হবে পরিবারের মানুষের কাছে বিভিন্ন গালমন্দ। এর থেকে কি ভাল না, যা হচ্ছে তাতেই সায় দেওয়া ????

তমা বলে, আমি জানতাম- আমি জানতাম আপনি এখন এ কথা বলবেন। আপনি এত কনফিউস কেন সব বিষয়ে বলেন তো ??? একটা ডিসিশান নিতে পারেন না !!! আর কখনো কোন দিন আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না। আমি আপনাকে ঘৃণা করি। মনে থাকবে তো, আমি আপনাকে ঘৃণা করি।

একটু আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। বেশ স্নিগ্ধ আবহাওয়া। অথচ সিফাতকেকেমন যেন অগোছালো মনে হচ্ছে। অবচেতন মনে মাটির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। একচিলতে উদ্বেলিত করা আনন্দ পরক্ষণেই তাকে আবার মাটিতে এনে ফেলে দিল।

মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলে, “আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি তুমি কোনদিন জানবে না। তোমার পরিবারের মানুষগুলোর কথা, আমার পরিবারের মানুষগুলোর ইচ্ছে, এগুলোর কথা ভাবার কারনেই এই ডিসিশান নিতে হলো। হাবীব ভাই তো আছে যে তোমায় অনেক ভালবাসে। তুমি তার কাছেই সুখে থাকবে। আর আমি না হয় দূর থেকে নিজের স্বপ্নটাকেই বিসর্জন দিলাম। আমায় ভুল বুঝো না তুমি…….ভুল বুঝো না……”

সেদিন রাতে সিফাত এমদম ঘুমোতে পারে নি। বিছানায় মুয়ে শুয়ে চোখের জ্বলে নাহিদ আর সজীবকে এসএমএস এ লিখেছে, “ যেমনি করে একচিলতে বুষ্টির মত এসেছিল তেমনিই চলে গেল তমা। আমি আবারো একা হয়ে গেলাম। আবারো হেরে গেলাম। শুনেছি, হেরে গেলে নাকি পালাতে হয়। বলতে পারিস, আমি পালিয়ে কোথায় যাব ?????

সারারাত তমার কথা ভাবতে ভাবতে একসময় সিফাত অনুশোচনায় ভুগতে শুরু করে। তার কাছে সবকিছু তুচ্ছ মনে হয়, মানুষের আশা-আকাঙ্খা, কে কি ভাবলো সব তার কাছে অর্থহীণ মনে হয়। সে কেমন যেন পাগলের মত আচরণ করতে শুরু করে। এমন অবস্থা যে তার তমাকে ছাড়া যেন চলবেই না। তার মাথায় কেবলই সজীবের কয়েকটি কথা ঘুরতে থাকে :
“ভালবাসা কোন সূত্র মানে না আর Negotiation should not go beyond our very soul”

তখনই সিফাত সিদ্ধান্ত নেয়, সে তমার কাছেই ফিরে যাবে। কিন্তু সে তো জানত না, বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
সাথে সাথে সে তার ভালবাসার কথা তমার মোবাইলে এসএমএস করে। বেশ কয়েকটা এসএমএস পাঠানোর পর সিফাত হঠাৎ তমার মোবাইলে ফোন দেয়। আর তমা ফোনটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে দেয়।

এর পর ৭ দিন সিফাত পাগলের মত তমাকে খুঁজেছে। তার মোবাইলে চেষ্টা করেছে, এসএমএস পাঠিয়েছে, তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু পায় নি। খুঁজে পায় নি তার প্রথম ভালবাসাকে। ……

আগামীকাল রাতে অবশেষে সিফাত আবার তার নতুন সেমিষ্টার ধরতে বিদেশের পথে পাড়ি জমাবে। যদিও অনেক রাত হয়ে গিয়েছে তবুও সে বসার ঘরের জানালা দিয়ে তারাভরা আকাশের দিকে নিথর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভাবছে, জীবনটা আসলে কি ???

প্রশ্নটা করেই আবার নিস্ফলক তাকিয়ে থাকে। খানিকক্ষণ পর আশেপাশের নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন তাকে প্রশ্নের উত্তরটা দিয়ে দেয়।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ভেসে আসে, জীবন মানে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের খেলা…….।

আর সিফাতের মন বলে ওঠে, তেমনি জীবন মানে অপেক্ষা….. অপেক্ষা…..

জানালার গ্রিল থেকে ফিরে সিফাত কাগজ-কলম নিয়ে তমাকে একটা চিঠি লিখা শুরু করে।

প্রিয় তমা,

বুকের ভিতর কেমন যেন করছে আমার। কোন কোন রাতে এমন হয় । কোন কিছুই করতে ভাল লাগে না; না গল্প করতে, আড্ডা দিতে, না ঘুমোতে, না গল্পের বই পড়তে। ফাঁকা ফাঁকা লাগে সবকিছু- মাথার ভিতর, বুকের ভিতর, আশেপাশের চারপাশ। তাই আপনাকে চিঠি লিখতে বসলাম। ভয় হয় চিঠির মূল্য না দিয়ে যদি অবঙ্গা করেন ? কারণ আমি শুধু আমার কাছের মানুষগুলোকেই চিঠি লিখি। খুব যত্ন করে লিখার চেষ্টা করি। তবে আজকে চিঠি লিখার প্রয়াসটা যতটা না শখের বসে তার চেয়ে বেশি প্রয়োজনের। যতদূর মনে পড়ছে, এটা আপনাকে লিখা আমার দ্বিতীয় চিঠি এবং এটাই শেষ। একটা কথা কি জানেন, আমি আমার কাছের মানুষগুলোকে খুব ভালবাসি। আমার কাছের মানুষগুলো আমায় যতটা ভালবাসে, আমায় যতটা ঘৃণা করে তার চেয়েও বেশি। হ্যাঁ, তার চেয়ের বেশি…………

একটা সময় ছিল যখন আকাশে পাখি উড়ে যেতে দেখলে বেশ আনন্দ হত। এখন তাদের দেখলে আমার চোখে জ্বল এসে যায়। মাঝে মাঝে আবার বাবুই পাখি হতে ইচ্ছে করে। সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও, আবার নতুন করে সবকিছু গোছানোর স্পর্ধা দেখাতে ইচ্ছে জাগে। আবার যখন মন বিষন্নতায় ডুবে যায় তখন কেবলই ঐ দূর নীলিমায় নিষ্ফলক তাকিয়ে থাকি আর নিঝের ব্যর্থতা গুলোর কথা ভাবি। কোন এক গল্পের বইতে পড়েছিলাম,
“মেয়েরা নাকি সারাজীবন অপেক্ষাই করে যায়……”

কথাটা শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই সত্য তা নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রেও সত্য। তবে একান্তভাবে আমরা যে জিনিসটার জন্য অপেক্ষা করি তা হল, প্রিয়জনকে পাশে নিয়ে তার সাথে সুন্দর একটি মুহূর্ত কাটানো……..। কিন্তু আজ আমার ভালবাসার মানুষকে নিয়ে স্বপ্নগুলো আলো-ছায়ায় হারিয়ে গেছে। রঙ্গিন স্বপ্নের মাঝে জলবিহীন বিষাদ-মরিচীকা প্রবেশ করেছে কবেই; যা আজ শুধুই গল্প।
আপনার সাথে আমার যতই ঝগড়া হোক না কেন, আপনি প্রতিশোধ হিসেবে যা কিছুই করেন না কেন, তবুও আমি এখন আপনাকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করি। তার থেকেও বড় কথা, আপনাকে আজও বড্ড ভালবাসি। কারন একটাই, মানুষ তার প্রথম ভালবাসা কখনোই ভুলতে পারে না। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমিও ভুলি নি, অতি যত্ন নিয়ে মনে রেখেছি। আপনার সাথে যখন ঝগড়া চলছিল অনেক দিন আগে তখন একদিন আমায় এসএমএস এ লিখেছিলেন,
“আমি জানি, আপনিও আমায় এখনো ভালোবাসেন……”

বিশ্বাস করুন, সেই দিন এই এসএমএসটা পড়ে বেশ হাসি পেয়েছিল। তবে আজ বুঝতে পারি, আপনার কথাটাই সত্য ছিল। এবার দেশে আসার পর আমি সবচেয়ে বেশি যেই জিনিসটা মিস করেছি সেটা হল আপনার সঙ্গ, এমনকি কারনে-অকারনেও আপনার কথা ভেবেছি। যে কোন একটা জিনিস ভাবতে শুরু করলেই তার সাথে আপনার একটা সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করতাম। যেমন, সেদিন দেখলাম বাইক এ চড়ে একজন ভাই তার মনের মানুষকে নিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। আর তার মনের মানুষটি অসীম বিশ্বাস আর নির্ভরতায় তার হাতখানা নিয়ে প্রিয়মানুষটির ঘাড় শক্ত করে চেপে ধরেছে। দৃশ্যটা দেখে ভাবলাম, আমার উপরও যদি আপনার এরকম বিশ্বাস থাকতো….!!!!! মানুষ দূরে চলে গেলে বোঝা যায় সে হৃদয়ের কতটা জুড়ে ছিল যা কাছে থাকলে মাঝে মাঝে বোঝা যায় না।

কিন্তু পরিস্তিতি যেখানে প্রতিকূলে সেখানে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য কতটুকু বলুন ??? আজ আমার ইচ্ছে করছে, আপনার কাছে গিয়ে আপনার হাত ধরে পৃথিবীর সমস্ত অধিকার নিয়ে বলি, “ তুমি শুধুই আমার……..আমার। আমায় একা করে চলে যেয়ো না। তুমি তো জান না, আমার ভালবাসার পুরোটা জুড়ে শুধুই তুমি”।
কিন্তু আমি জানি, এ কথাটা আমার আপনাকে বলা হবে না। কোন দিন না। আর তাই তো, শত অনিশ্চয়তার মাঝে না হয় আমার স্বপ্ন, আমার ইচ্ছেটাকেই বিসর্জন দিলাম।

পরাজিত মানুষের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই রকম। তারা সারাজীবন ভাবে এক-রকম, স্বপ্ন দেখে এক-রকম কিন্তু তাদের সাথে ঘটে আর এক-রকম। আর স্বপ্ন ভাঙতে ভাঙতে একসময় তাদের নীল হয়ে যাওয়া।

এবার দেশে ফেরার পর থেকেই আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করার সাহস যোগাড় করছিলাম। কিন্তু পারি নি। অবশেষে আমাদের কথা হয়েছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপনাকে এসএমএস দিয়েছি। শেষে আপনি একদিন বললেন, আপনি আপনার এংগেষ্টমেন্ট ছিন্ন করে আমার কাছে ফিরে আসবেন। আমিও আপনাকে প্রচন্ড ভালবাসি, তাই এ কথাটা শুনার পর নিশ্চই আমার থেকে বেশি খুশি হওয়ার কথা, তাই না ???? অথচ, আপনি এই কথাটা বলার পর আমি প্রতিটি বিষয় অতি সময় নিয়ে ভেবেছি। আপনি আমায় বলেছেন, আপনার এংগেষ্টমেন্ট এর খবর নাকি আপনার মা, খালা সহ আরো অনেকেই জানে। তাই এ সময় আপনার এংগেষ্টমেন্ট ভাংলে আপনার পরিবার কষ্ট পাবে। কথাটা বাইরে জানাজানি হলে খারাপ হবে। তাই আমি অনেক ভেবে নিজেই কষ্ট বরণ করে নিলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, না আপনার কাছে আসার বা আপনাকে ফিরে পাওয়ার চিন্তা আমার মাথায় রাখবো না। আপনিতো বলেছেন, আপনার নতুন মনের মানুষটি আপনাকে অনেক ভালবাসে। আর তাই আপনারতো কোন ক্ষতি হচ্ছে না। অথচ যখন আপনাকে বললাম, যে আপনি আপনার বর্তমান মানুষটির কাছেই থাকেন, তারপর আমি মনের মাঝে একপ্রকার ব্যথা অনুভব করেছি। অনেকটা পাঁজড় ভাঙ্গার মত ব্যথা। যেন আপনাকে ছাড়া আমার চলবেই না। তাই আপনাকে আমি আবার এসএমএস পাঠিয়েছি, যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। বিশ্বাস করুন, আমি তখন কেমন যেন পাগল হয়ে গিয়েছিলাম ! অথচ আপনাকে আর খুঁজে পাই নি….. গভীর ভাবে দেখতে গেলে, সবদিক দিয়ে আমিই হেরে গেলাম। আপনার পরিবারের মানুষের কথা, আপনার কথা, বৃহত্তর মানুষের সুখের কথা ভাবতে গিয়ে আমাকেই সবকিছু হারাতে হল। আপনার পরিবারের আনন্দের কথা ভাবার কারনে আপনি আমাকেই খারাপ ভাবছেনতো, এ নিয়ে আমার আফসোস নেই। জানেন, মাঝে মাঝে ভাবি - পৃথিবীটা কত এগিয়ে গেছে, অথচ আমি এখনো বুঝি সেকেলেই রয়ে গেলাম ! আমার চিন্তাভাবনা গুলোও বুঝি সেই পুরোনো আমলের মানুষের মতোই রয়ে গেল !!! নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে অন্য সব মানুষের আনন্দের কথা ভাবা, প্রিয় মানুষের পরিবারকে নিজের পরিবার ভাবা ইত্যাদি এ যুগে বোকামি ছাড়া বুঝি আর কিছু না।

মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ কি বলতে পারেন ? মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ হল সরলতা। এই সরলতা এমন একটি গুণ যার মাঝে থাকে না কোন ভণিতা, কোন স্বার্থ, কোন উদ্দেশ্য……… স্পৃহাহীণ আমি এক অদৃশ্য পরিচালকের আঙ্গাবহ দাস। নিজেই নিজের জন্য যে গোলক ধাঁধা তৈরি করেছি তা থেকে কি চাইলেই আমি বের হয়ে আসতে পারি ??? না, পারি না। বাইরে থেকে কি বোঝা যায় একটি মানুষের ভিতরে কি চলছে ? না, যায় না। আমার মাঝে যে একটি নয় হাজারো পলিপ আছে তা আমি জানি। আর এক একটি পলিপ তৈরি হয়েছে এক-একটি ভুলের জন্য, এক একটি ব্যর্থতার জন্য, কাছের মানুষগুলোর কাছে থেকে অবহেলা পাবার জন্য, কাছের কিছু বন্ধুদের দ্বারা বারবার Betray এর স্বীকার হওয়ার জন্য…

কবিতা পড়তে আমার খুব ভাল লাগে। এটি আমার একটি অতি প্রিয় কবিতা। না, আমি লিখি নি, সংগৃহীত…

কি দেব তোমায় বল ?
আমি যে মেঘ নই যে তোমায় বৃষ্টি দেব
আমি অসীম নীলিমাও নই যে তোমায় স্নিগ্ধতা দেবো
আমি এক ব্যথিত মানুষ, এমন হৃদয় ভরা ভালবাসি কই ?
আমার ঘরে ফুল ফোটাব, কখনো হাসির রাশি দেব উপহার
তার মত কিছুই তো নেই !!!!!
আমার হাতদুটি এত আলোকিত নয় যে,
অসুখী শরীরে ছোঁয়া দেব আর সেরে যাবে তোমার সব অসুখ।
আমিতো শিশির নই যে তোমার রুক্ষপত্র সিক্ত করবো
আমি কোন কুলুকুলু নদী নই যে,
তোমার হৃদয়ের শস্যক্ষেত ভিজিয়ে দেবো।
এমনকি কোন অরণ্য উদ্ভিদ নই যে,
তোমার দুঃখের পাশে ফুটেঁ থাকবো চাঁপা কি বকুল হয়ে।
আমি কোন শিউলি নই তোমার, ভোরের শুভ্র শয্যা বিছাব।
আমি কোন তৃণ নই যে, বুক পেতে দেব মাথা রেখে অবসাদে শোবে।
এমনকি ঝড়া পাতাও নই যে, বন হবো
ভালবেসে টিপটাপ সারারাত ঝড়বো তোমার সিথানে।
আমি শুধু দিতে পারি ………………… একগুচ্ছ কষ্ট ।।


মাঝে মাঝে যখন খুব একা লাগে তখন চোখ বন্ধ করে প্রাণপনে ভাবতে চেষ্টা করি, “আমার ভালবাসার মানুষটি নীল রঙের শাড়ী, হাতে কাঁচের চুড়ী, কপালে ছোট্ট ঠিপ, ঠোঁটে হালকা লিপষ্টিক, খোঁপায় বেলী ফুলের মালা পড়ে আমার পাশে এসে বসেছেন। হাসিমুখে আমার হাতখানা আলতো করে নিজের দুই হাতের মাঝখানে নিয়ে গল্প করছে আর আমি পূর্ণ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছি !” এভাবে ভাবতে ভাবতে আমায় কখনও কখনও এই ভাবনাটাকে বাস্তব বলে মনে হয়। যেন আমি তার গন্ধ পাই, তার স্পর্শ অনুভব করতে পারি।

উচ্ছলতায় ভারা দিন গুলোতে যেমন ছিলাম, এখনও সেই দিন গুলোর মুখোমুখি হলে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি। তবুও মনের এককোণায় একটা বিষন্নতা সর্বদাই থাকে। অন্যসব পরাজিত আর ব্যর্থ মানুষের মত আমিও তাকিয়ে আছি অনাগত ভবিষ্যতের দিকে, অপেক্ষায় আছি একটি সুন্দর মুহুর্তের, একটুকরো সুখের……।

হয়ত একদিন আমার জীবনেও স্থায়ী ভাবে আসবে কোন এক নারী – ভালবাসার আলোকবর্তিকা নিয়ে। আর সেদিন পর্যন্ত পৃথিবীর

সমস্ত ভালবাসা বুকে নিয়ে আমার তাঁরই জন্যে অমলিন অপেক্ষা- যে হবে সেই মুহুর্তে আমার অতি আপনজন……..।
কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চাওয়া ঠিক না। এতে কেবলই কষ্ট বাড়ে….. জীবনে আমি অনেক ভুল করেছি। মাঝে মাঝে মনে হয় ভুল কোন জীনিসই জীবনে রাখতে নেই। আমরা প্রতিটি স্বতন্ত্র মানুষের কাছে জীবনের অর্থও ভিন্ন ভিন্ন। চারদিকে অসংখ্য ভুলের ছড়াছড়ি। প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা, প্রবঞ্চিতকে দেয় দাহ আর অনুতপ্তকে কি দেয় জানেন ?

প্রেম, অনুতপ্তকে দেয় হাহাকার। তীব্র হাহাকার, পাঁজর ভাঙার মত হাহাকার……………… এই হাহাকার সঙ্গী করেই আমি হাঁটছি……. বহু পথ যেতে হবে আমায়……

আজ চমৎকার জ্যোৎনা উঠেছে। আকাশের ঠিক মাঝখানে যেমন মায়াবতী নারীরা কপালের ঠিক মাঝখানে টিপ পড়ে, তেমনি ফুঁটে আছে চাঁদ মামা। আর সূর্য থেকে আলো নিয়ে তাকে জ্যোৎস্নায় রূপান্তরিত করে আমারদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। চারদিক জ্যোৎনার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে।আমার মত ঘূণেধরা,আট-পৌরে মানুষগুলো - যারা হাজারো পলিপ নিয়ে চলে, তারাও আজ জ্যোৎনার রূপালী আলোয় নিজের ছায়া দেখতে পায় যেমন করে আমি পাচ্ছি। সব মানুষ, দালানকোঠা, জীবজন্তু, পশুপাখি ইচ্ছেমত জ্যোৎস্না গায়ে মেখে আনন্দে অবগাহন করছে। ব্যর্থ আর ঘূণে-ধরা মানুষগুলো আকাশের দিকে তাকিয়ে জ্যোৎস্না গায়ে মাখতে মাখতে ভবিষ্যতের স্বপ্নে আচ্ছন্ন হয়। নিজের গোলাপ পূর্ণ হৃদয় সম্পূর্ণ সমর্পণ করতে চায় ভালবাসার মানুষটিকে আর ভালবাসার মানুষটিকে আলিঙ্গন করে অন্তহীণ সুখ অনুভব করতে চায়। আমার কাছে যদিও সুখটির চেয়ে স্বপ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। কারন সুখের স্বপ্ন, সুখের চেয়ে প্রলম্বিত। সুখ মুহুর্তের আর স্বপ্ন ……………???

স্বপ্নতো চিরদিনের…………… চিরকালের……………

ভাল থাকবেন। শুভ হোক আপনার জীবনের প্রতিটি দিন- আপনার কাছের মানুষদের সাথে নিয়ে আর ভালবাসার মানুষটির অকৃত্রিম ভালবাসায়….. আমিন, আমিন, আমিন।

ফেলে আসা গোধুলীতে হল না আর ফানুস উড়ানো
ভুলের স্রোতে ভুলে গিয়ে তোমারো দেয়া হয় না আর হাতছানি
আমারি স্বপ্নের আকাশ আজ কৃষ্ণসাজে সাজলো
আর হবে না পিছু ফিরে দেখা জীবনের গ্লানি।


ইতি
সিফাত

সিফাতের ফ্লাইট এর সময় হয়ে যাচ্ছে। তার সাথে দেখা করতে এসেছে সোনিয়া নামের একটি মেয়ে। মেয়েটা সিফাতকে অনেক ভালবাসে। সিফাতের পছন্দ-অপছন্দ, ভাললাগা সবকিছুই সে জানে।

চলে যাওয়ার আগে মেয়েটি সিফাতকে বলে,
“ ভাইয়া ! আমার অসীম ভালবাসার বিনিময়ে হলেও কি আপনি আমায় একবিন্দু ভালবাসা দিতে পারবেন না ???”

মাথা নিচু করে ফেলে সিফাত। পড়া না পারা ছাত্রের মত বলে, “একজনের ভালবাসায় আমার হৃদয়টা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে। আর একজনের ভালবাসা আমি কোথায় রাখবো ? আর আমি যে আমার ভালবাসাটুকু একজনকে দিয়ে দিয়েছি কবেই। আজ তোমাকে দেওয়ার মত আমার কাছে কিছুই নেই। আমার ক্ষমা করো’।

কথাটা বলেই সিফাত গাড়িতে উঠতে এগিয়ে যায়। পেছনে মেয়েটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে। কান্নার জ্বলে মেয়েটির চোখের কাজল লেপটে গিয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে।

গাড়ি এয়ারপোর্ট এর দিকে চলছে। সিফাত এর পাশে বসে ওর একটা হাত ধরে রেখেছে সজীব। যেন কিছুতেই কাছের মানুষটিকে চলে যেতে দিবে না। কী মনে করে যেন সজীব একটু পর পরই কেঁপে উঠছে।

সিফাত বুঝতে পারে কিন্তু কিছু বলে না…… যেন নীরবতা পালনের এক খেলায় নেমেছে সবাই।

বোর্ডিং হয়ে গেচে। সিফাত এবার ইমিগ্রেশনে দাড়াবে। যাওয়ার আগে সে শেষ বারের মত সমস্ত আবেগ নিয়ে সজীবকে জড়িয়ে ধরে আর চিবুক বেয়ে দুজনের চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা গরম জ্বল বেড়িয়ে পড়ে। এরপর ব্লেজারের পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে সজীবের হাতে দিয়ে বলে, পারলে এটা তমাকে পাঠিয়ে দিস। ….

প্লেনের সিটে বসে সিফাত তমাকে এসএমএস লিখে….

আমি তোমায় কতটা ভালবাসি তা তুমি কোন দিন জানবে না, কোন দিন না। ‘যে থাকে আঁখি পল্লবে তার সাথে কেন দেখা হবে; নয়নের জ্বলে যার বাস- সে তো রবে নয়নে নয়নে’। তুমি আমার দৃষ্টিসীমার মাঝে বেঁচে থাকবে অনেক অনেক দিন।

প্লেনের ক্যাপ্টেন ঘোষণা দিল, এখনই তারা যাত্রা মুরু করবে। সিফাত শেষবারের মত এসএমএসটা তমা’র নাম্বারে পাঠিয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে দিল।

ধীরে ধীরে প্লেন রানওয়ে পার হয়ে আকাশে উড়তে শুরু করল।

সিফাত মনে মনে তমার কথা ভাবছে। তার মন তাকে প্রশ্ন করে, আচ্ছা তমা কি চিঠি বা এসএমএসটা পাবে ???

মুচকি হাসে সিফাত। মনে মনেই উত্তর দেয়, পাক বা না পাক তবুও…… অপেক্ষা।

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, কষ্টকে যে পুষে রাখতে চায়, ব্যথার শাস্তি তার চিরদিনের।

আজন্ম স্বপ্নের বিসর্জন দিয়ে, কিভাবে শূন্যতা নিয়ে বেঁচে থাকা যায় তাই এবার শেখার পালা……….