Wednesday, November 2, 2011

এলোমেলো মন…

উৎসর্গ…
অসাধারণ মানুষ তিনি ! যখনই দেখা হয়, খুব আন্তরিকতার সাথে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করেন। এত চমৎকার করে কথা বলেন যে কেবল তন্ময় হয়ে শুনতে ইচ্ছে করে !

প্রিয় সাকিব ভাই, সাকিব ফেরদৌস ভাই

সবাই মুগ্ধ করতে পারে না, কিন্তু আপনি আপনার কর্ম আর ব্যবহার দিয়ে আমাদের অনেককে মুগ্ধ করেছেন। অসাধারণ একজন মানুষ হয়েও আপনি থেকে যান আমাদের ধরা-ছোঁয়ার একেবারে কাছে; যেখাতে লাল-নীল প্রজাপতি ঘুরে বেড়ায, টুপটাপ বৃষ্টি নামে অবেলায়।
আমি মাঝেমাঝেই স্বপ্ন দেখি, কোন একদিন আপনি আমার এক অখ্যাত গল্প নিয়ে ছোট্ট একটা হলেও নাটক বানাবেন, আর আমি মুগ্ধতার চোখে তা দেখবো !



আকাশ পোড়ে না জানি, চাঁদ কিংবা তারার আগুনে
আমাদের ভাগ্য শুধু পোড়ে
যারা দেখি, আর পোড়ে
আমাদের সবুজ সাবেকী অভিমান সেই সাথে’।

দূর থেকে দেখলে সিফাতকে ঠিক সিফাত মনে হবে না। দুই পা মেলিয়ে এমন ভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে যেন সে এক পাথরের মূর্তি। চোখ দুটো স্থির, সমস্ত চেতনা দিয়ে শরীরটাও স্থির।
মাঝে মাঝেই এই জায়গায় বেড়াতে আসে সিফাত। মন খারাপ হলে আসে, একা একা লাগলেই চলে আসে।
আর এখানে আসেই সে আশেপাশের গাছগুলো, ঐ দূর নীল আকাশ আর মুক্ত মনে উড়ে যাওয়া পাখিগুলোর সাথে কথা বলে। তাদেরকে নিজের জীবনের বিষাদ ভরা অংশের গল্প শুনিয়ে মন হালকা করে।
মাটির উপর ফুঁটে থাকা ঘাসফুল গুলোকে একসময় হাত দিয়ে নেড়ে দেয়। আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। কারন, এগুলো যে তার পরম বিশ্বস্ত বন্ধু।
আর এভাবে খানিকটা সময় কাটালেই তার মন ভালো হয়ে যায়।
ঘাসফুল গুলোর ওপর হাত বুলাতে বুলাতে সে বুঝতে পারে, কেউ একজন তার পেছনে এসে দাড়িয়েছে।
পেছনে তাকাতেই দেখে ইমন এসেছে। ও ইমন ! এসো ভাইয়া, বোস এখানে।
সিফাতের পাশে বসতে বসতে বলে, ভাইয়া আপনার কি মন খারাপ ?
যদিও আপনার বসে থাকার ভঙ্গি আর আলতো করে ঘাস পূলগুলো ছুঁয়ে দেওয়াই বলে দেয় আপনার মন খারাপ !
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখে হাসি এনে সিফাত বলে, তুমি বেশ ছোট ছোট জিনিস লক্ষ্য করেছ ! তোমার বিশ্লেষণটা একেবারে মিথ্যে নয়।
মুচকি হেসে ইমন বলে, ভাই আপনি কি জানেন মানুষ কখন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলে ?
সিফাত আকাশের দিকে তাকিয়ে জিঞ্জেস করে, কখন ???
যখন মানুষ নিজেকে লুকোতে চায়। সে সময় মানুষ জোর করে হাসার চেষ্টা করে, আপন মানুষকে বিভিন্ন উল্টোপাল্টা কথা শুনাবার চেষ্টা করে।
তাই জোর করে হাসতে নেই, এতে করে তার স্বকীয়তায় ভাটা পড়ে।
একটা প্রশ্ন করি ভাই ? অবশ্যই ভাইয়া।
আপনি কি কোন মানুষের দৃষ্টিসীমায় নিজেকে দেখতে পেয়েছেন ???
খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পর সিফাত বলে, হ্যাঁ এই পুথিবীতে দুইজন মানুষের মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। এর মাঝে একজন আমার বন্ধু আর অন্যজন নিজের মত করে চলে গিয়েছে।
একটু মিথ্যে বলা হল, যিনি চলে গিয়েছে তিনার মাঝে আমি আমাকে খুঁজে পেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাই নি। বড্ড দেরি করে ফেলেছিলাম তো…..।
আমিও একজনের মাঝে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলাম। খুব ভালবাসতাম তাকে। মনের মাধুরী মিশিয়ে, নিজের অস্তিত্বে অনুভব করতাম তাকে। ঠিক বন্ধনের তিন বছরের মাথায়, হঠাৎ একদিন আমায় ফোন করে বলে, আমি আর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখবো না। তাকে কারন জিঞ্জেস করেছিলাম। কি বলেছে জানেন ?
আমি ধেকতে ভাল না, আমার সিজিপিএ ভাল না, ভাল ভার্সিটিতে পড়ি না তাই নাকি আর আমাকে পছন্দ হচ্ছে না। সে এখন আইবিএ তে পড়ে কোন ছেলের সাথে প্রেম করবে। প্রায় ৭ দিন তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু লাভ হয় নি।
অবশেষে তাকে শৃঙ্খলার বেড়ী থেকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম। অথচ আমি এখনও আমার দৃষ্টিসীমায় তাকে খুঁজে পাই। বুঝল না, সে কিছুতেই বুঝল না…….
ইমন তার কথা শেষ করতেই পরিবেশটা যেন আরো নিঃস্তব্ধ হয়ে যায়। কেমন গুমোট একটা আবহাওয়া।
আর আমি ? নরম সুরে সিফাত বলে।
আমায় একটা মানুষ পছন্দ করতো। পাগলের মত ভালবাসতো। অথচ কোন দিন আমি তার ভালবাসার মূল্য দিই নি। অবশেষে সে যখন আমার জীবন থেকে চলে গিয়ে অন্য একটি মানুষের হাত ধরে নতুন করে পথচলা শুরু করল, ঠিক তখন বুঝতে পারলাম আমি কি হারালাম !
জানো ! মাঝে মাঝেই স্বপ্ন দেখি , সে নীল রঙের শাড়ী, হাতে কাচের চূড়ী, কপালে ঠিক মাঝখাতে ঠোট্ট একটা কালো টিপ আর চুল গুলো কোলা রেখে আমার পাশে এসে বসেছে। আর আমি তার সামনে বসে তার একটা হাত ধরে তার দিকে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছি !
সে আমায় জিঞ্জেস করে, আমি কেন নীল শাড়ী পড়েছি জানো ???
পড়া না পারা ছাত্রের মত আমি মাথা নিচু করে বলি, না জানি না।
কারন, নীল শাড়ী আমায় বেশ ভালো মানায়। যদিও বেদনার রং নীল, তবুও আমার কিন্তু কোন বেদনাবোধ নেই।
মুখটা আমার কাছে এনে সে কানেকানে ফিসফিস করে বলে, “তুমি যে তোমার ভালবাসার আলতো ছোঁয়ায় ঐ দূর নীলিমায় আমার সব বেদনাগুলো উড়িয়ে দিয়েছ”।
কথাটা বলে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায় সে।
ঠিক তখনই আমি তার কাছে গিয়ে আলতো করে আমার ঠোঁট দিয়ে তার কপাল ছুঁয়ে দিই।
স্বপ্নটা বলা শেষ করেই সিফাত কেমন যেন আনমোনা হয়ে আবার ঘাসের দিকে তাকিয়ে থাকে।
হঠাৎ জেগে ওঠে বলে, সর‌্যি আমার আবোল-তাবোল স্বপ্নের কথা শুনার জন্যে।
হাসতে হাসতে ইমন বলে, আপনিতো জানেন না- আপনার স্বপ্নটা কতটা চমৎকার !
স্বপ্ন হয়ত চমৎকার কিন্তু প্রিয় মানুষ পাশে না থাকলে এই স্বপ্নটাকেই আবার পানশে মনে হয়।
ইমন বলে, ভাইয়া কথাটা ঠিক বললেন না ।
স্বপ্ন কখনোই অর্থহীণ হয় না। কারন, সবাই চমৎকার করে স্বপ্ন দেখতে পারে না। আর এই পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষই এটাকে পুঁজি করে বেঁচে থাকে।
আচ্ছা ইমন, ভালবাসার মানুষ যদি ভালবাসার গভীরতা না বোঝে অবঞ্জা করে তাহলে কেমন লাগে বল তো ?
আমাদের প্রিয় মানুষগুলো আসলে বোঝে না তাদের আমরা কতটা ভালবাসি !
ভাই, আপনার কোন কাছের মানুষ কি এরকম করেছে আপনার সাথে ???
না, আমার সাথে হয় নি। কথাটা বলেই সে চুপ হয়ে যায়।
অনেকক্ষণ পর বলে, আমার এক খুব কাছের মানুষের সাথে এরকম হয়েছে।
সেই প্রিয় মানুষটি একজনকে ভালবাসত। সারাদিন যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন, সময় করে বেশ আগ্রহ নিয়ে ভালবাসার মানুষটির খবর নিত। একদিন সেই মানুষটি মোটরসাইকেলে এক্সিডেন্ট করে !
সে যখন তার এক্সিডেন্ট এর খবর তার প্রিয় মানুষটিকে বলে তখন উত্তরে সে কি বলেছে জান ???
বলেছে, ‘তুমি ঔষধ খেয়ে নিও। তারপর একটা লম্বা ঘুম দাও, দেখবে ভাল লাগবে”।
আমরাও কিন্তু জানি, ঔষধ খেতে হবে এবং আমরা ডাক্তারও দেখাব। কিন্তু প্রিয় মানুষটি একটু উৎকন্ঠায় পড়ে যাবে, একটু মমতা নিয়ে কথা বলবে, একটু আগ্রহ নিয়ে খবর নিবে- এটা কি খুব বেশি কিছু ?
না ভাই বেশি কিছু নয়। ভালবাসার শক্তি অনেক প্রখর ভাই। এই শক্তি অনেক অসুখ নিমিষেই ভাল করে দেয়।
একবার আমার পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয়েছিল। প্রায় ২ দিন আমি কাঁতরাচ্ছিলাম। কিন্তু যখনই আমরা মা খুব আলতো করে আমার পেটের উপর হাত রাখতেন, তখনই আমি আর ব্যথা অনুভব করতাম না। আমি তাকিয়ে দেখতাম, মা পরম যত্নে চৌম্বকীয় শক্তিতে আমার সমস্ত ব্যথা শুষে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এই মমতা দেখেই আমি প্রায় অর্ধেক সৃস্থ হয়ে গিয়েছিলাম।
পৃথিবীটা কেমন যেন রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে। আত্মার বন্ধনের কথা বললে মানুষ এখন হাসে। প্রাণের বন্ধুর কথা বললে আমাদের সেকেলে স্বভাবের ভাবে। ভালবাসার মূল্যের কথা বললে “আঁতেল” ভাবে !!! পৃথিবীটা বুঝি অনেক এগিয়ে গেছে যেখানে বন্ধনের প্রগাঢ়তা, সম্পর্কের বির্নিমান, আত্মার টান শ্বদগুলো বড্ড বেশি অনুপস্থিত।
কিন্তু আমি এগুলোকে পুঁজি করেই বেঁচে থাকতে চাই। চাই কাছের মানুষগুলোকে ভালবেসে যেতে আজীবন।
কারন, তাদের মাঝেই যে আমি আমার সুখ খুঁজে পাই।
তোমায় বলেছিলাম না – একজন একজন আমায় খুব ভালবাসত। সে চলে যাওয়ার পর বুঝেছিলাম সে হৃদয়ের কতখানি জুড়ে আছে। ও চলে গেল কিন্তু কিছু জিনিস আমাকে শিখিয়ে গেছে। আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ঘটনা থেকে কিছু না কিছু শিখি।
মানুষকে মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি সে আমায় শিখিয়ে গেছে। নইলে কাছের মানুষ কখন যে দূরের মানুষ এমনকি অপরিচিত হয়ে যাবে আমরা বলতেই পারবো না।
এগুলো বেশ সহজ কথা, আমরা প্রত্যেকেই জানি কিন্তু একটু মেনে চলতে হবে কেবর। আর এরকম অনেক টুকরো টুকরো ঘটনাই ঘটে যাচ্ছে আমাদের সাথে, আমাদের প্রিয় মানুষগুলোর সাথে……….
সাথে সাথে আমরা বেদনায় নীল হয়ে যাচ্ছি একটু একটু করে নীরবে…….
প্রিয় পাঠক, চলুন না আমাদের বন্ধনগুলোর প্রতি আমরা আকেটু যত্নশীল হই হোক সে বন্ধন কোন এক বন্ধুর সাথে, আমাদের প্রিয় মানুষটির সাথে, আমাদের কোন এক আত্মীয়ের সাথে………
আর চেষ্টা করি, কাছাকাছি থেকে বন্ধনের প্রগাঢ়তা অনুভব করতে……..।