৪ মাস আগের কথা। আমি ১০ দিনের ছুটিতে দেশে গিয়েছি। একদিন আমি,কনক,প্রতিম আর সজীব চারজন মিলে মিরপুর কাজীপাড়া যাচ্ছি বাসে করে। কনক-আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুর একজন ,সজীব আমার অতি প্রিয় আর কাছের একজন ছোটভাই, আর প্রতিম ? সেও আমার প্রিয় এক ছোট ভাই, সাথে সাথে আমার সাংগঠনিক বন্ধু।রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম দেখে আমরা ফার্মগেট থেকে হাঁটতে শুরু করি। সামনে সজীব আর প্রতিম এবং পেছনে আমি আর কনক। হাটছি আর গল্প করছি। কত যে গল্প……….!!!!!!! এই গল্প থেকে আবার সেই গল্প। কাজীপাড়ার বাসায় সজীবের কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিক করলাম সুমন ভাইয়ার সাথে দেখা করব। এর ঠিক দুইমাস আগে ভাইয়া বিয়ে করেছে। তাই নতুন ভাবিকে দেখার একপ্রকার অকুলতাও অনুভব করছিলাম। হঠাৎ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল। তবুও আমরা হাটতে থাকলাম। এক-সময় পায়ে ব্যথা ধরে যাওয়ায় আমরা বাসে করে মিরপুর ১০ নাম্বারে গিয়ে নামলাম। দিনটি ছিল শুক্রবার, ছুটির দিন। নামাযের সময় প্রায় পেরিয়ে গেছে। সুমন ভাইয়াকে ফোন করে বললাম, আমি এখন মিরপুর ১০ নাম্বার এ, তুমি কই ? আমিতো এখন নামাযে ভাইয়া। তুই একটা কাজ কর ওখানে দাঁড়া আমি আসছি। ১৫ মিনিট পরে সুমন ভাইয়া আসল । আমায় দেখা মাত্রই মুখে স্নিগ্ধ হাসি দিয়েই জড়িয়ে ধরল। বলল, কেমন আছিস রে ভাইয়া ? আমি বলি, ভালো। তারপর আমরা সবাই মিলে ভাইয়ার বাসায় গেলাম। নতুন বিবহিত ভাইয়ের বাসায় ছুটির দিনে দুপুরে হঠাৎ ৪ জন মেহমান এসে উপস্থিত হলে কেমন লাগে বলুন ??? নিশ্চই যার বাড়িতে যাওয়া হয় তার মনের কোথাও না কোথাও একটু বিরক্তির সৃষ্টি হয়। অথচ আমরা বাড়িতে যাওয়ার পর ভাবী অনেক ভালো ভাবেই আমাদের গ্রহণ করলেন। আমরা সোফায় বসে সুমন ভাইয়ার সাথে হরেক রকম গল্প করছি। আর রান্নাঘরে বেচারি নতুন ভাবী এই ৪ জন অঘোষিত মেহমানের জন্য রান্না করছেন। আমরা সবাই মিলে ভাইয়ার বিয়ের ছবি গুলো দেখলাম আর ভাইয়ার সাথে মজা করলাম। ইতোমধ্যেই খিদায় পেট চো চো করছে। রান্না শেষে আমরা সবাই খেতে বসলাম আর ভাবি সুযোগ্য গৃহিনীর মত অতি যত্নে পরিবেশন করলেন। আমি ভেবে অবাক এত কম সময়ের মধ্যে তিনি কিভাবে ৬ রকমের তরকারী রান্না করে ফেললেন ! কিন্তু তখন এত কিছু ভাবার সময় কই ! সবাই খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। আধাঘন্টা ধরে আমরা খাইলাম। পেটের মাঝে এক আঙ্গুল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা ছিল না। তৃপ্তি করে খাওয়ানোর পর ভাবি খেতে বসলেন।কনক, প্রতিমকে তিনি বিয়ের পরেই দেখেছেন কিন্তু আমাকে দেখে নি। তাই খাওয়ার টেবিলে বসে তিনি আমার সাথে গল্প করছিলেন। আর আমি মালয়শিয়াতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিচিত্র সব অভিঙ্গতার কথা বলছি। তিন শুনছেন আর হাসছেন। যতদূর জানি, ভাবী একটি ভালো স্কুলে পড়ান। তিনি এমন ভাবে শুনছিলেন যেন তার কোন প্রিয়-বাধ্যগত ছাত্র তিনাকে কোন মজার গল্প বলছে আর তন্ময় হয়ে শুনছিলেন। অনেক গল্প করার পর অবশেষে বিকেল ৫ টার দিকে আমরা বিদাই নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। সেদিন বেশ ভালো লেগেছিল। আমি জীবনে অনেক মানুষের রান্না খেয়েছি। তবে হাতে গোণা মাত্র কিছু মানুষের রান্না আমি আজও ভুলি নি। তাদের মাঝে আমাদের শ্রদ্ধেয় ও গুণী ভাবীও পড়েন। আমি ঠিক করেছি যখনই দেশে যাব, তখনই একদিন অন্তত সময় করে ভাইয়ার বাসায় খাব। আমি জানি আমায় বলতে হবে না, দেশে গেলে সুমন ভাইয়াই কান গরম করে দিবে একটি কথা বলে, তুই কবে আমার বাসায় আসবি …………
সুমন ভাইয়ার সাথে আমার পরিচয় বেশি দিনের নয় তবুও অল্প দিনেই সে আমায় তার অনেক কাছে টেনে নিয়েছে। অতি সহজেই মানুষকে আপন করে নেওয়ার গুণটা আমার এই ভাইটির আছে আমি জানি। আমাদের এই পথচলায় জীবনের বিভিন্ন বাঁকে বিভিন্ন ধরনের যাত্রি জোটে কিন্তু তাদের মাঝে কত জনের কথা আমাদের মনে থাকে বলুন ??? মনে থাকে শুধুমাত্র কিছু মানুষের কথা। আমি দেশের বাইরে আসার পর আমার পরিবারের বাইরে মাত্র ২/৩ জন মানুষ আমার নিয়মিত খবর নিয়েছে আর তাদের মাঝে সুমন ভাইয়া অন্যতম। আমি আমার কাছের মানুষগুলোর কাছে বেশি কিছু কিন্তু চাই না। শুধু মাত্র আমার একটু খবর নিবে তাতেই আমি মহা-খুশি।
মানুষকে ভালো লাগতে কি বেশি কিছু লাগে ? না লাগে না। একটি মানুষকে ভালো লাগার জন্য মুখের একটি কথা,একটি হাসি, একটা মুহুর্তই যথেষ্ট। আর সাথে একটা ফুটফুটে মন দরকার। এগুলোর প্রতিটি সুমন ভাইায়ার আছে। যেদিনই ফোন দেয় এত চমৎকার করে বড় ভাইয়ের দাবি নিয়ে আমার সাথে কথা বলে যে কি বলব ! তার ঐসব কথা গুলো আমার বেশ প্রিয়। তাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য রইল অজস্র শুভকামনা আর দোয়া। ইসলাম ধর্মে পূর্ণজন্ম বলে কিছু নেই। যদি থাকত তবে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম, আমার দ্বিতীয় জন্মে যেন তিনি আমায় শৈশবেই সুমন ভাইয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এমন একটি মানুষ তিনি,যার সাথে কাটানো প্রতিটি সময় আপনার ভালো লাগতে বাধ্য। যখনই আমার সাথে দেখা হোক বা কথা হোক, অসীম দাবি নিয়ে কথা বলতে যে তিনি কিভাবে পারেন আমি ভেবে অবাক হই এখনো ! তার এই ব্যাপারটা আমার বড় প্রিয়। আমার একজন প্রিয় কাছের মানুষ সে; আশা করি আগামীতেও থাকবে আর আমাকে ভালোবেসে যাবে এভাবেই…………
এই সকল প্রিয় মানুষের ভালবাসার দাম আমি কোন দিন দিতে পারব না, কোন দিন না। তাই আমি ক্ষমাপ্রার্থী।কোন এক গল্পের বইতে পড়েছিলাম, মানুষ একবার ভালোবাসা পেলে তা বারবার পেতে চায়। দ্বিধাহীন ভাবে বলছি, আমিও পেতে চাই। এই সকল কাছের মানুষদের ভালোবাসার প্রতীক্ষায় কাটে আমার প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহুর্ত………।