গত বছরের মে মাসের শেষের দিকে আমার বন্ধু সাফিল এর পরিবারের সাথে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বেড়াতে গিয়েছিলাম। ভ্রমণ আমার ছোটবেলা থেকেই খুব প্রিয়। মজাও করেছি খুব। সাগরের জ্বলে নেমেই মনে হয়েছে যেন আমি, রিয়াজ, সাফিল, বোরহান মামা মিলে একদল শিশু সমুদ্রের জ্বলে গা ভিজিয়ে জ্বল নিয়ে খেলা করছে। আমার মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি গুলোর বর্ণনা দিতে গেলেই মানুষ বুঝি শব্দ বঞ্চনায় ভোগে।যেমনটি ভুগছি এখন আমি। আর তাইতো হয়ত কবি বলেছিরেন, “ভাব যেখানে গভীর, ভাষা সেখানে নীরব”।আনন্দের সৌরভটা আমর মাঝে আজও অম্লান, এখনো আমি তার স্নিগ্ধতা অনুভব করি-সাগর, সাগরের বিশাল জ্বলরাশি…….।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার- দীর্ঘ একটা সময়ের ভ্রমনের পর কোচ এর জানালা দিয়ে প্রথমেই চোখের দৃষ্টি সীমানায় ধরা পড়ে, সাগরের বিশাল বিস্তৃত জ্বলরাশি আর সাগরের মনোমুগ্ধকর স্রোত। সাগর পাড়ে ঢেউগুলো ক্ষণে ক্ষণে আচড়ে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল, ঢেউগুলো যেন একে অপরের সাথে খেলা করছে। আর আমাদের বলছে, তোমরাও এদিকে এসো। এই জ্বলের মাঝে অবগাহন করো। দেখো ! আমি তোমাদের সিক্ত করে দিবো, আর তোমাদের মাঝে যাদের অনেক দুঃখ-কষ্ট, পলিপ আছে তাদের কাছে সে সব কিছু নিয়ে আমি আমার বক্ষে ধারণ করবো। এসো বন্ধু, এসো নীপবণে, এসো কর স্নান স্ত্রোতধারা জ্বলে………
রাঙামাটি, টেকনাফ, হিমছরি, ফয়েজ লেক কত জায়গায় যে বেড়িয়েছি !!!! এবার আসি রাঙামাটি যাওয়ার বর্ণনায়….. রাঙামাটি যাওয়ার পথ হল পাহাড়ি আঁকাবঁাকা, উঁচু-ঢালু রাস্তা। মাঝে মাঝে এমন বাঁক চোখে পড়বে যে, আপনার হৃদয় আতকে উঠবে। আবার মাঝে মাঝে অনেক উঁচুতে উঠতে হয় যেন আকাশকে ছোঁয়ার ব্যাকুল আশা নিয়েই আমরা চলছি। আবার মাঝে মাঝে এমন ঢালু হয়ে যায় যেন মনে হয় আমরা জ্বল-প্রপাতের জ্বলরাশির মত সগৌরবে আচড়ে পড়ছি…….। আর রাস্তার দু’ধারে বিশাল গাছের সারি। পাহাড়, পাহাড়ি সরল মানুষ, বিচিত্র পাখি …………. সবমিলিয়ে অপূর্ব প্রাকৃতিক ভারসাম্যে প্রকৃতির রূপের মাঝে আমাদের প্রকৃতি দর্শন আর ভ্রমণ………
প্রকৃতি আসলেই তার অপূর্ব সৌন্দর্য দিয়ে আমাদের ভরিয়ে রেখেছে। ছোট ছোট নদীর চারপাশে পাহাড়, পাহাড়ি বসতি, বিভিন্ন গাছপালার সারি, নদীতে বিভিন্ন নৌকার চলাচল আমাদের মনকে বিমোহিত করে।আমাদের প্রকৃতির প্রেমে আরো উদ্বেলিত করে। আমাদের সাথে প্রকৃতি তার আত্মার বন্ধন আরো দৃঢ় করে। আমাদের উদ্বুদ্ধ করে মানুষকে আরো বেশি ভালবাসতে……। আর সাগরে স্নান……….? তার রোমাঞ্চের কথা বলে শেষ করার মত ভাষা আমার নেই। আমার মনে হয়, আমাদের প্রত্যেকেরই অন্তত জীবনে একবার হলেও সাগর দেখতে যাওয়া উচিত, সাগরের জ্বলে গা ভাসানোর আনন্দ নেওয়া উচিত। আমার বিশ্বাস, মানুষ একবার গেলে আবারও যেতে চাইবে কারন প্রকৃতি কেবলই তার প্রেমে মানুষকে মত্ত করতে চায় তার সৌনন্দর্য দিয়ে…………
শেষ করবো সাগরে সৌর্যাস্ত দেখার বিবরণ দিয়ে…… সাগর পাড়ে দাড়িয়ে বিশাল জ্বল-রাশির দিকে তাকিয়ে আছি আর ঢেউগুলো আমার পায়ে আচড়ে পড়ছে, ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে আমার পা, সিক্ত হয়ে মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে আমার শরীর।আর সে সময় যদি ভালোবাসার মানুষটি পাশে থাকে তবে সূর্যাস্ত দেখার আনন্দটা হবে অনুভবের কারণ এটাকে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। গোধূলী লগ্নে সোনালি আলো আমাদের উপর এসে পড়বে আর ঢেউ গুলো আচড়ে পড়বে। ঠিক তখন ভালবাসার মানুষটির হাতটা ধরে চিৎকার করে আমার বলতে ইচ্ছে করে, ওই সাগর, অস্ত যাওয়া সূর্যকে সাক্ষী রেখে আমি বলছি, আমি তো্মায় ভালবাসি। জীবনের আমার এই পথে আমি তোমার হাতটা ধরে রেখে পাড়ি দিতে চাই। চাই তোমার আর আমার স্বপ্নের বানস্তবায়ন করতে……………
আর এভাবেই আলো-ছায়ার গল্প আর নির্মল-স্নিগ্ধ স্বপ্ন আঁকতে আঁকতে শেষ হয় কক্সবাজার ভ্রমণের শেষ অধ্যায়টি………..
সত্যি কি অধ্যায় শেষ হয়ে যায় ??? না, কখনো না। একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হয় অন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হওয়ার জন্যই তো ………… তাই না ?